রনির গড়ন হালকা পাতলা, বেশ লম্বা, ফর্সা আর মায়াভরা সুন্দর চেহারা। পাভেল ওর থেকে ইঞ্চি দুয়েক খাটো, এ্যাথলেট টাইপ বডি, গায়ের রঙ তামাটে। একটা মফস্বলে থাকে ওরা।
খুব ছোটবেলা থেকেই ওদের দুজনের গলায় গলায় ভাব। যাকে বলে __ দুই শরীর এক আত্মা। একে অপরকে না দেখে থাকতে পারে না। আর রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হাত বা গলা না ধরে হাঁটে না।
ক্লাসে সবসময়ই রনি ফার্স্ট এবং পাভেল সেকেন্ড হয়। দিন পনের হলো ওদের জেএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ফলে এই ছুটিতে খুব কম সময়ই ওরা আলাদা থাকছে।
উপজেলা কম্পাউন্ডের সামনে দিয়ে যাওয়ায় সময় গেটের দিকে তাকাল পাভেল, সেখানে বৃক্ষমেলার তোড়জোড় চলছে। ওর পাশেই হাঁটছে রনি। তার পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিল ও। "কিরে ব্যাপারটা আমাকে নিজেই বলবি না খোঁচাতে হবে ?"
"মানে ? কিসের কথা বলছিস তুই ?" রনি অবাক হলো।
"কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুই খুব খুশি প্লাস এক্সাইটেড। এবার ঝটপট ঝেড়ে কাশ তো।"
রনি লাজুকভাবে হাসে।
"হুমম...." পাভেল বলে। "আমাদের হিরো মনে হয় হিরোইন পেয়ে গেছে। তো... হু'জ দ্য লাকি গার্ল ?"
"দোলা।"
"এই নামের কাউকে তো চিনিনা। এখানে নতুন এসেছে, তাই না ?"
রনি মাথা নাড়ে। ওর চোখে খুশি ঝলকাতে থাকে।
"ঘটনাটা নিশ্চই এই সপ্তাহের মধ্যেই ঘটেছে।"
"তুই বুঝলি কিভাবে ?"
"বাহ। তুই আমাকে দেখে আমার মোজার রঙ বলে দিতে পারিস আর আমি এটুকু বুঝবো না ? তা কবে থেকে এসব চলছে ?"
"নৌকা বাইচের দিন ওকে প্রথম দেখেছি।"
"আর তখনই হয়ে গেল লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট। আমি মাত্র একটা দিন ছিলাম না। আর অমনি তোর মনটা উড়ে গিয়ে একজনের কাঁধে বসে পড়ল।"
পাভেলের কথায় দুজনেই হাসতে লাগলো।
ফোর লেন হাইওয়ের কাজ চলছে। সেখানে অনেক উচু উচু বালির ঢিপি বানানো হয়েছে। তার উপর গজিয়েছে নরম আর সুন্দর ঘন সবুজ ঘাস। প্রতিদিন সকাল বিকাল অনেক মানুষজন এখানে ঘুরতে আসে।
এরকমই একটা বড় ঢিপির উপর দিয়ে হাঁটছে ওরা। রনি, পাভেল, আরাফাত, অর্ণব, দোলা আর তার দুই বান্ধবী। এদের মধ্যে আরাফাত এবং দোলার এক বান্ধবীর মধ্যে রিলেশন আছে। রনি আর দোলাকে এক করার পিছনে প্রায় পুরো ক্রেডিটটাই তাদের।
সন্ধ্যা-সন্ধ্যা ভাব। পশ্চিম আকাশে ডুবন্ত সূর্যের কমলা আভা ছড়িয়ে আছে, ঠান্ডা বাতাস বইছে।
রনি দোলাকে প্রপোজ করল। সঙ্গে সঙ্গেই এ্যাক্সেপ্ট করল দোলা। কারণ আগে থেকেই সে রাজি হয়ে আছে। সবাই হাততালি দিয়ে উঠল, ওদেরকে কংগ্রাচুলেট করল।
রনির রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ওকে ডাকল পাভেল। রনি ওকে ভিতরে যেতে বলল। ঘরে ঢুকে দেখল রনি কম্পিউটারের সামনে বসা।
"কি করছিস ?"
"কিছুই না।"
"চল মাঠে যাই।"
"তুই বোস আমি রেডি হয়ে আসছি।"
দুজন বাসা থেকে বের হলো। পাভেল খেয়াল করল খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে রনির চোখমুখ। ওর সমগ্র সত্ত্বা থেকে যেন সজীবতা আর উৎফুল্লতা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মনে মনে খুব খুশি হলো পাভেল।
"রনি। রনিইইই...."
ওরা দুজন ঘুরে দাঁড়াল। রাস্তা পার হচ্ছে দোলা। আর হাত নেড়ে রনিকে ডাকছে।
খুশিতে একশো ওয়াটের বাল্বের মত জ্বলে উঠল রনির মুখ।
দোলা এগিয়ে এসে রনির হাত ধরল। তারপর আদুরে গলায় বলল, "তুমি তো এখন ফ্রি তাই না ? চল ঘুরতে যাই।"
রনি একবার দ্বিধাগ্রস্তভাবে পাভেলের দিকে তাকালো। পাভেল তাড়াতাড়ি একবার ঘড়ি দেখল তারপর ব্যাস্তভাবে বলল, "রনি, আমার একটা আর্জেন্ট কাজ আছে। আমি যাই।পরে ফোন দিস।"
রনির পিঠ চাপড়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল ও। রনি আর দোলাও হাত ধরে উল্টো দিকে হাঁটা ধরল।
ওদের প্রাইমারি স্কুলের সামনে চলে এল পাভেল। একটু আগেই ছুটি দিয়েছে। এখনো বের হচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এসময় গেট দিয়ে বেরিয়ে এল ছোট দুটি ছেলে। একসাথে গল্প করতে করতে হেঁটে গেল ওর পাশ দিয়ে।
পাভেলের মনে পড়ল কয়েক বছর আগে ও আর রনিও এই গেট দিয়েই এভাবেই বের হতো। পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখতে পেল রনি আর দোলা অনেক দুর এগিয়ে গেছে। দূর থেকে দেখেও বুঝতে পারল রনি হাসছে। তা দেখে পাভেলও হেসে ফেলল। ওর চোখেমুখে ফুটে উঠল বন্ধুর জন্য অফুরন্ত শুভ কামনা। ধীরে ধীরে
একটা বাঁক পার হয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল ওরা। দাঁড়িয়ে রইল পাভেল।
পরের মাসে BKF ( Bangladesh Karate Federation ) এ একটা কম্পিটিশান আছে। তাই পাভেলকে প্রাক্টিসের পিছনে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। এই সময়টায় ও সত্যিই রনিকে মিস করছে। কারণ এরকম সময়ে রনি সবসময় ওর পাশে থেকে ওকে উৎসাহ দেয়।
একদিন বিকেলে জিম সেন্টার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রনির সাথে দেখা হয়ে যায় ওর। রনি আইস্ক্রীম পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
তাকে ডাক দিয়ে এগিয়ে গেল পাভেল। ওকে দেখে হাসে রনি। হালকাভাবে কোলাকুলি করে দুজন।
এমন সময় একটা কসমেটিকসের দোকান থেকে বের হয়ে ওদের পেছনে এসে দাঁড়ায় দোলা।
রনির কাঁধের ওপর দিয়ে পাভেল দেখে দোলা ওর দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তাই তাড়াতাড়ি রনিকে ছেড়ে দিয়ে কাজ আছে বলে সরে যায় ও।
রনি দোলাকে নিয়ে আইস্ক্রীম পার্লারে ঢোকে।
"আচ্ছা, ও সবসময় আমাদের পিছে ঘুরঘুর করে কেন ?"
"কে? কার কথা বলছ ?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রনি।
"কে আবার, ঐ পাভেল।" বিরক্ত হয়ে বলে দোলা।
"পিছনে ঘুরঘুর করবে কেন ? আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই সবসময় একসাথে থাকি।"
"বেস্ট ফ্রেন্ড, সো হোয়াট ? তোমার কি কোনো প্রাইভেসি নেই ?"
"রিল্যাক্স দোলা। তুমি কিন্তু ওভার রিএ্যাক্ট করছো। আর অনেস্টলি পাভেল আর আমার মধ্যে আলাদা কোনো প্রাইভেসি নেই।"
"তোমার কাছে না থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের রিলেশনের মাঝে ও কেবলই একজন থার্ড পার্সন। অথচ যখনই আমরা একসাথে থাকি, ও এসে হাজির। কেনো ? শেমলেস কোথাকার।"
"তুমি কিন্তু খুবই বাড়াবাড়ি করছ।" রনি কড়া গলায় বলে।
"তুমি ওর জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলছ !" কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করল দোলা। "বেশ তাহলে ক্লিয়ারলি বল কে তোমার কাছে বেশি আপন। আমি না পাভেল ?"
হসপিটালের করিডোর ধরে পাগলের মতো ছুটতে থাকে পাভেল। একজন ওয়ার্ড বয়ের সাথে ধাক্কা লেগে লোকটার হাতের ট্রে উড়ে গেল, আরেকটা রুমের সামনে রাখা সিলিন্ডারের সাথে ধাক্কা লেগে ওর হাত কেটে গেল।
১০২ নাম্বার ক্যাবিনের সামনে এসে থামল। ঝড়ের বেগে ভিতরে ঢুকল। সারা শরীর ঘেমে গেছে ওর, চোখে আতঙ্ক, হাত-পা কাপছে।
বেডে শুয়ে আছে রনি। মুখ ফ্যাকাশে, ডান হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ, বামহাতে ব্লাড সাপ্লাইজ পাইপ লাগানো।
রনির মা বসে ছিলেন। তারসাথে চোখাচোখি হলো পাভেলের। উনি উঠে বেরিয়ে গেলেন।
পাভেল যেন পায়ে জোর পাচ্ছে না। আস্তে আস্তে গিয়ে বেডের পাশে দাঁড়াল। তারপর দুই হাত দিয়ে রনির কলার ধরে ঝাকাতে লাগল।
"পাগল হয়ে গেছিস তুই ? এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আঙ্কেল-আন্টির কথা একবারও ভাবলি না ? য়্যু সেল্ফিস।"
ম্লান হাসি হাসল রনি। এক হাত দিয়ে পাভেলের কাঁধ চাপড়ে দিল।
রনি সুস্থ হওয়ার পর ওকে বাসায় নেয়া হয়। কিন্তু ও আর সেই আগের রনি নেই। ওর জীবন থেকে সব আনন্দ যেন হারিয়ে গেছে। সবসময়ই অন্যমনষ্ক আর মন খারাপ করে থাকে।
এদিকে এই ঘটনা জেনে গেছে সবাই। আর পাড়াপ্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব,ক্লাসমেট সবার কাছেই আসল ঘটনা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে। আর এসব সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রনির বাবা-মা আর পাভেল।
"পাভেল এসব কিভাবে ঘটলো ?" কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন রনির মা।
পাভেল সবকিছু খুলে বলে।
"আন্টি, আমরা কেউ ধারণাও করিনি এমন কিছু ঘটবে।"
"তুই আমাদেরকে এসব কথা আগেই কেনো বললি না ?"
কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে রইল পাভেল। তারপর বলল, "দেখুন আন্টি, রনির এমন একটা সেন্সিটিভ কথা আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে আপনাকে বলতাম? জানি যে সেটা করাই আমার উচিত ছিল। কিন্তু ন্যাচরালি কি আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব ? আপনিই বলুন।"
রনির মেন্টাল রিকভারির জন্য সবরকম চেষ্টা করছে পাভেল। ওকে আগের থেকেও বেশি সঙ্গ দিচ্ছে, হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না।
ও ভালো করেই জানে যে রনি আর দশটা ছেলের মতো নয়, যাদের কাছে রিলেশন করাটা হচ্ছে জাস্ট টাইম পাস করার একটা ক্যাজুয়াল প্রসেস। আবার দোলা মেয়েটার নামেও তো এখন পর্যন্ত কোনো খারাপ কথা কানে আসেনি। তাহলে ওদের মধ্যে সমস্যাটা বাধঁল কি নিয়ে ? রনিকে এই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করার প্রশ্নই ওঠে না। আরাফাত মনে হয় কিছু জানে। কিন্তু কেনো যেন ওকে কিছু বলছে না। কি করা উচিত তা ও কিছুতেই ফিক্স করতে পারছে না ।
একদিন বিকেলে রনিকে টেনে বাসা থেকে বের করে হাঁটতে বের করল পাভেল। ঠিক করল দোলাকে নিয়ে কিছু কড়া কথা বলে ধমকানি দেবে আজকে ওকে। ঠিকই তো পুরো থানার মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র ও, ভেরি ব্রাইট ফিউচার, সেখানে কোথাকার কোন দোলা নামের একটা মেয়ের জন্য ও সব শেষ করে ফেলবে ? যত খাটি ভালোবাসাই হোক না কেনো এখনের যুগে এতটা দেবদাস হওয়ার পেছনে কোনো লজিক নেই।
রনিকে দাঁড়াতে বলে ঝালমুড়ি কিনতে যায় ও। এদিকে রনি অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটতে শুরু করে। একসময় একেবারে হাইওয়ের উপরে উঠে যায়। ঠিক তখনই উল্টোদিক থেকে ভীষন গতিতে ছুটে আসতে থাকে একটা বিশাল কার্গো ট্রাক। অন্যমনষ্ক রনির কানে সে ট্রাকের হর্নের আওয়াজ পৌঁছোয় না। ট্রাকটা ছুটে আসতেই থাকে।..............
একেবারে শেষ মুহূর্তে দৌড়ে এসে ওকে ধরে গড়িয়ে পড়ে পাভেল। পড়ার সময় রনিকে এক হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরেছিল ও। তাই তার কোনো চোট না লাগলেও ওর অন্য হাতটা ছড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
"আই.... আই এ্যাম সরি।" রনি জড়ানো গলায় বলে।
ওর দিকে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে থাকে পাভেল।
রাতে বিছানায় শুয়ে কেবলই এপাশ-ওপাশ করতে থাকে পাভেল। বারবার চোখের সামনে বিকেলের সিনটা ভেসে উঠতে থাকে। যদি রনির কিছু হয়ে যেত। ঝট করে শোয়া থেকে বসে পড়ে ও। "আই মাস্ট ডু সামথিঙ।" আপনা-আপনিই ওর হাতের মুঠো পাকিয়ে যায়।
পরের দিন বিকেলে ও দোলার সাথে দেখা করে রনির বর্তমান সিচুয়েশনের কথা সব খুলে বলল।
"আমাদের মধ্যস্থতা করার জন্য তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বুঝি পেল না রনি ?" তাচ্ছিল্য করে বলল দোলা।
"দেখুন আপনাদের মধ্যে কি হয়েছে তা আমি জানিনা। কিন্তু আপনি প্লিজ রনির সাথে ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলুন।" পাভেল অনুরোধ করল।
"সত্যিই তুমি কিছু জানো না ?" দোলা ব্যাঙ্গ করে বলল। "আচ্ছা তুমি তোমার বন্ধুকে খুব ভালোবাসো তাই না ? তা ওর জন্য কি করতে পারবে ?"
"সব।" ভীষন দৃঢ় শোনালো পাভেলের কণ্ঠ।
"আমাদের দুজনের মাঝ থেকে সরে যেতে পারবে ?"
"হোয়াট ননসেন্স !" ও এবার ভীষন অবাক হলো। "আমি আবার আপনাদের মাঝখানে এলাম কি করে ?"
"আমাদের রিলেশনের মাঝে একমাত্র বাঁধা হচ্ছো তুমি। জানোনা বন্ধুত্ব হচ্ছে একটা ঠুনকো ছেলেমানুষি সম্পর্ক। আর আসল এবং স্থায়ী সম্পর্ক হচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের সম্পর্ক। অথচ রনির কাছে আমার চেয়ে তুমিই বেশি আপন।"
দোলার কথাগুলো শোনার পর পাভেল পুরো হতভম্ব হয়ে গেল। কোনো কথা বলতে পারল না। তবে শীঘ্রই নিজেকে সামলে নিল। "আপনি রনিকে ভালোবাসেন ?"
"সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না।" দোলা বাঁকা সুরে বলল।
"আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। রনিকে সত্যিই ভালোবাসেন আপনি ?"
আচমকা পাভেলের এমন কঠোর কণ্ঠ শুনে ঘাবড়ে গেল দোলা। "হ্যা।" জবাব দিল সে।
"বেশ। যদিও আপনার মতো নিচুশ্রেণীর মন-মানষিকতার একজনের সাথে রনির থাকা উচিত বলে মনে করি না।" এবারে ওর গলায় তাচ্ছিল্যের আভাস। "তবুও কেবল রনির খুশির জন্য আজকের পর থেকে আমি আর ওর সাথে কন্ট্যাক্ট করবো না। বাট আপনি যদি রনির সাথে কোনো রকম বিট্রে করার চেষ্টা করেন, আই মি আমি শিয়্যোর যে আপনার মতো একটা মেয়ে তা করবে। যাইহোক, তাহলে আমি কিন্তু শুধু আপনাকে নয় বরং আপনার পুরো ফ্যামিলির থেকেই হিসেব নিয়ে ছাড়ব।" দোলার মুখের উপর কথাগুলো বলে ওখান থেকে চলে গেল পাভেল।
পরের দুদিন বাড়ি থেকে বের হলো না পাভেল। রনির করা কল বাজতে বাজতে শেষ হয়ে গেল। কিন্তু ও রিসিভ করল না।
এরপরের এক বিকেলে পাভেল একা একা গিয়ে কালভার্টের উপরে একটা পিলারে বসে রইল। ছোটবেলায় বর্ষাকালে এই কালভার্টের ওপর থেকে লাফিয়ে নিচের পানিতে নেমে গোসল করতো ও আর রনি। এখনও বর্ষাকালই চলছে।
এমন সময় কোথা থেকে যেন রনি এসে পাশের পিলারটায় বসলো। ওর দিকে তাকালো পাভেল। ওর মুখে-চোখে খুশি ফিরে এসেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওর বুকটা হালকা হয়ে গেল।
মাথা নিচু করে বসে রইল পাভেল। রনিও কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। একসময় হঠাত পাভেলের কাঁধে ঝাকি দিয়ে বলে উঠলো, "ওই দেখ।"
পাভেল নিচে তাকাতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিল রনি। আচমকা পড়ে গিয়ে ডুবে গেল পাভেল। পরক্ষণেই ভেসে উঠল। রনিও হাসতে হাসতে পানিতে লাফিয়ে পড়ল। পাভেলের ঘাড় ধরে একটা চুবনি দিল। পাভেল বুঝতে পারল__ এ হচ্ছে সেই পুরনো রনি।
রনির ফোন বেজে উঠলো। দোলার কল। একসময় এই কলে খুশি হতো রনি। কিন্তু এবার নাম্বারটার স্থান হলো ব্লকলিস্টে।
কয়েক মাস পরে ওদের রেজাল্ট বের হলো। রেজাল্ট আর কি হবে ? রনি থানা ফার্স্ট আর পাভেল এবারও সেকেন্ড।
1. আপনাদের পছন্দের ক্যারেক্টার কে ?
2. বাস্তব জীবনে আপনি কার ক্যারেক্টার রিপ্রেজেন্ট করেন ?
রনি, দোলা নাকি পাভেল
লেখকঃ
নীল আহমেদ
No comments:
Post a Comment