Note : গল্পটি একটা বাস্তব ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত রেখে ( কেবল নায়ক-নায়িকার নাম চেঞ্জ ) লেখা হয়েছে । এজন্য অনেকক্ষেত্রে মনে হতে পারে যে পারিপার্শ্বিক বর্ণনা বেশি দেয়া হয়েছে। কাজেই পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলে তার জন্য আমি দায়ী নই। পড়তে ইচ্ছে করলে নিজ দায়িত্বে পড়ুন। গুডলাক ।
জানুয়ারির প্রথম দিক। স্কুলে ভর্তি চলছে। তাই নতুন নতুন ছাত্রছাত্রী দেখা যাচ্ছে। স্কুলের পুরো কম্পাউন্ড জুড়েই চাঞ্চল্য। চিৎকার-চেঁচামেচিতে যেন অস্বাভাবিক রকম জীবন্ত হয়ে রয়েছে।
লাইব্রেরিয়ান পপি ম্যাডামের কথামত একগাদা বই নিয়ে একাডেমিক বিল্ডিংয়ের সিড়ি বেয়ে নেমে আসছিল আকাশ। অত্যন্ত মেধাবী, ভদ্র আর নীতিশীল এই ছেলেটা বরাবরই ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে আসছে। স্কুলের সকল টিচার-স্টুডেন্ট ওকে একনামে চেনে।
এতগুলি বইয়ের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ও। মনে মনে সাদিমকে কড়া কিছু গালি ডোনেট করল। ব্যাটা এমনি সবসময় সাথে থাকে, কিন্তু এখন গিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে আসা নতুন মেয়েদের দেখছে। তবে কেবল ঐ দেখা পর্যন্তই। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েই ওকে ঘাস তাক নেহি দালা। কিন্তু ব্যাটার স্বভাব শোধরানোর নয়।
এ্যাকসিডেন্টটাও ঘটলো তখনই। একটা মেয়েও এই সিড়ি দিয়েই উঠে আসছিল। আর সিড়ির মোড়ে এসে ধাক্কা লাগল দুজনের।
আকাশের হাতের বইগুলো ছিটকে এদিক-ওদিক পড়ে গেল। আর মেয়েটা সিড়ির ল্যান্ডিংয়ের উপর পড়ে গেল।
" ও্যহ হ্যেল.." বইগুলো ওঠাতে শুরু করল আকাশ। মেয়েটাকে খেয়াল করে নি।
বইগুলো গুছিয়ে উঠে দাঁড়াল ও। ততক্ষণে মেয়েটাও উঠে পড়েছে।
" এইযে চোখদুটো কি পকেটে রেখে চলেন নাকি ? " মেয়েটা রাগী গলায় বলল।
" আ..দেখুন দোষ আমাদের দুজনেরই আছে। আমার অংশটুকুর জন্য আমি সরি বলছি। "
" দেখেশুনে চলতে না পারলে ঘরে থাকা শিখে নেবেন। " আবারো বাঁকাসুরে বলল মেয়েটা।
" ও তাই। তাহলে আপনি যেহেতু ভদ্র ভাবে কথা বলতে পারেন না তাই চুপ থাকা শিখে নেবেন। এ্যান্ড জাস্ট টু লেট য়্যু নো এই সিড়িটা শুধু ছেলেদের ব্যাবহারের জন্য। আপনাকে দেখে স্কুলে নতুন মনে হচ্ছে, শুধু সে কারণেই আমি সরি বলেছি। " কথাগুলো বলে আকাশ আর দাঁড়ালো না।
ঐদিন বিকেলে রনি, রোহান, প্রদীপ আর সাদিম মাঠে আকাশের জন্য অপেক্ষা করছিল।
" আকাশকে আরেকটা কল দে তো। " রনি প্রদীপকে বলল।
" আর কল দিতে হবে না ঐযে আকাশ আসছে। " আঙুল দিয়ে রোহান দেখাল।
কে জি স্কুলের সামনের পথটা দিয়ে মাঠে ঢুকল আকাশ।
মাঠটাকে একটা সেমি স্টেডিয়াম বানানোর কাজ চলছে। তবে কাজ শুরু করার আগেই সাধারণত বাংলাদেশে যা হয়ে থাকে তা হচ্ছে__ কাজটা অমুক করেছে এই টাইপের স্তম্ভ তৈরি করা। এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। তবে এতে কাজের কাজ এটুকুই হয়েছে যে স্তম্ভটার ওপরে বসে আড্ডা দেয়া যায়।
ওরা সবাই ওটার ওপরেই বসে ছিল। আকাশ গিয়ে লাফ দিয়ে ওটার ওপর উঠে বসল।
" সরি ইয়ার, দেরি হয়ে গেল। " আকাশ সবার উদ্দেশ্যে বলল।
" হ্যা ভাই হিরো তো সবার পরেই এন্ট্রি নেয়। আমরা তো সাইড রোল। তাই কোনো দাম নেই। " প্রদীপ বলল।
চটাস করে ওর পিঠে একটা চড় মারল আকাশ।
" আমাদের মধ্যে লিডার কিংবা হিরো হচ্ছে একমাত্র রনি। বুঝেছিস ? "
সবাই হেসে উঠল। এবার কাঠি করার মাস্টার সাদিম নড়েচড়ে বসল।
" তো ভাইজান, আপনার নামে এসব কি শুনছি ? আপনি নাকি স্কুলের নতুন মেয়েদের সাথে ধাক্কা খেয়ে বেড়াচ্ছেন। " সাদিম বলল।
ওর কথার উত্তর দেয়ার আগে সবার দিকে তাকাল আকাশ। প্রদীপকে দেখে মনে হলো সে সাদিমের পক্ষে।
" কি করব ভাই। তুই তো পুরনো সবগুলো মেয়েকে বুক করে রেখেছিস। তাদের কাছে তো আর আমরা পাত্তা পাবো না তাই অন্য রাস্তায় ট্রাই করছি। " এই বলে সাদিমের মুখে জুতা মেরে দিল আকাশ।
সবাই আবারও হেসে দিল। সাদিমের মুখ কালো হয়ে গেল।
" আসলে কি হয়েছিল বলতো। আজকে এই টপিকটাই সবার কাছে ট্রেন্ড হয়ে গেছে। " রনি বলল।
" স্ট্রেঞ্জ! " আকাশের চেহারা সিরিয়াস হয়ে গেল। " নতুন একটা মেয়ে না জেনে ছেলেদের সিড়ি দিয়ে উঠছিলো। তখন আমার সাথে ধাক্কা লেগেছে। দ্যাট'স ইট। এটাকে এতবড় ইস্যু বানানোর কোনো লজিক তো দেখছি না। "
" ঠিকই ভাই। কেবল আমাদের কপালই খারাপ। আমাদের সাথে এমন হয়না তো তাই আমরা কন্সেপ্টটা ঠিক জানি না। " গা জ্বালানো ভঙ্গিতে বলল সাদিম।
" আমাকে কি এসব ফালতু কথা বলার জন্য ডেকেছিস তোরা ? " সবার দিকে রাগী চোখে তাকালো আকাশ। তারপর সাদিমের দিকে চেয়ে বলল, " অটোতে আসার সময় আমার পাশে অচেনা কোনো মেয়েকে বসতে দেখলেও তো তোর হার্ট এ্যাটাক হয়ে যায়। কিন্তু ভাই আমার কাছে অন্তত মেয়েরা অতটা দামি নয় যতটা তোর কাছে। কিন্তু এই কথাটুকু বোঝার ক্ষমতা তোর নেই। কারণ তার জন্য পার্সোনালিটি বলতে কিছু থাকা দরকার যা তোর একেবারেই নেই। "
সাদিম কোনো কথা বলল না। অন্য সবাইও চুপ। পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেল।
" আকাশ বাদ দে। ও জাস্ট একটু মজা করেছে। তুই কেন সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস ?" রনি বলল। কারণ আকাশ কেবল রনির কথাই শোনে।
" মজা করার জন্য এটা ছাড়াও অনেক টপিক আছে। তোরা সবাই জানিস যে এই টপিকটা আমি পছন্দ করি না। "
" আচ্ছা বাদ দে ওর ভুল হয়ে গেছে। " এবারে রোহান বলল। " আর সাদিম তুই কি আকাশের রাগের ব্যাপারে জানিস না? না কি মার খাওয়ার শখ হয়েছে ?"
পনের তারিখের পর থেকে রেগ্যুলার ক্লাস হওয়া শুরু হলো।
প্রথম দিন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এ্যাসেম্বলিতে যোগ দিল বর্ষা। স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে ও। দেখতে গল্প বা উপন্যাসের নায়িকাদের মত না হলেও বেশ সুন্দরী সে। তবে আচার-আচরণ আর স্বভাবে খুবই মার্জিত।
এ্যাসেম্বলির প্রথমে হালকা এক্সারসাইজের পর নতুন ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে স্পিচ দিলেন হেড স্যার। এসময় ওভার স্মার্ট আর ওভার ভদ্র ঘরের সুসন্তানেরা তাঁকে নিয়ে নিয়ে অনেক উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করতে লাগল।
বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা কানে আসছিল। তাই ভীষন বিরক্ত লাগছিল বর্ষার কাছে। যাইহোক একে একে কার্যক্রম শেষ হয়ে আসছে।
এইসময় শপথ পাঠ করানোর জন্য একটা ছেলে আসলো। তাকে দেখে চিনে ফেলল বর্ষা। স্কুলের প্রথম দিন ঐ ছেলেটার সাথেই ওর ধাক্কা লেগেছিলো। আর ছেলেটাও খুব এ্যাটিটিউড দেখিয়েছিল।
ছেলেটাকে খেয়াল করে দেখল ও। পরনে কড়া লন্ড্রি করা কম্প্লিট য়্যুনিফর্ম। ফুলহাতার শার্টটা একটু টাইট আর হাতা গোটানো। ফলে নড়াচড়ার সময় বাইসেপের আকৃতি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মাথায় আর্মি কাট চুল। চেহারায় আভিজাত্য আর ব্যাক্তিত্বের ছাপ। মানানসই কণ্ঠে শপথ পাঠ করালো, মাঠের শেষ প্রান্ত থেকেও তা স্পষ্ট শোনা গেল।
ক্লাসে মোট তিন সারি বেঞ্চ। প্রথম দুটো ছেলেদের আর তৃতীয় সারিটা মেয়েদের জন্য।
ক্লাসে টিচার আসার আগেই বেশ কয়েকটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেল বর্ষার।
ছেলেদের প্রায় সবগুলো সিটই ফাঁকা। তবে মাঝমাঝেই একজন-দুজন ভিতরে আসছে, মেয়েদের দিকে তাকিয়ে পাশের জনের সাথে ফিসফাস করছে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরেই প্রায় একসাথে সবগুলো ছেলে হুড়মুড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে যার-যার সিটে বসে পড়ল। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই ক্লাসে ঢুকলেন শফিক স্যার। অনেক লম্বা উনি।
একেবারে মাঝের সারির প্রথম বেঞ্চটা স্যারের ডেস্কের সাথে মেশানো। বেঞ্চটায় ভদ্র দেখতে দুজন ছেলে বসা। একটা সিট খালি।
" মে আই কাম ইন স্যার ? "
আপনা-আপনিই প্রায় সবার চোখ ঘুরে গেল দরজার দিকে।
সেখানে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা লেজার খাতা।
স্যার ওকে হাতের ইশারায় ভিতরে আসতে বললেন।
ভিতরে ঢুকে হাতের খাতাটা স্যারের ডেস্কে রেখে ডেস্কের সাথে মেশানো বেঞ্চটার খালি সিটটায় গিয়ে বসল আকাশ। বেঞ্চটায় আরো রয়েছে রনি আর প্রদীপ। রোহান আর সাদিম পিছনের বেঞ্চে।
বর্ষাও আকাশকে দেখেছিল। রোল কলের সময় সে আরো জানতে পারলো যে আকাশ ক্লাসের ফার্স্ট বয়।
ক্লাস শুরু হলেও পড়াশোনা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। বিশেষ করে ক্লাসটিচার অর্থাৎ শফিক স্যার এখনও ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় তথ্য লেজার খাতায় তুলে সারতে পারেন নি। ক্লাসের প্রায় পুরো সময়টাই তাঁকে এসব কাজে সাহায্য করল আকাশ। অন্য সবার সাথে সাথে তা বর্ষারও চোখে পড়লো।
থার্ড বেলের পর টিফিন দেয়া হলো। সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসল। এসময় অনেকেই একেবারে বাসায় চলে গেল।
বর্ষার পরিচিত মেয়েগুলোও বাসায় চলে গেল। ও ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নিল। তারপরও অনেকটা সময় বাকি রয়ে গেল। তাই ও লাইব্রেরির দিকে গেল।
ওদের ক্লাসরুমটা যে ফ্লোরে সে ফ্লোরেরই একেবারে শেষে লাইব্রেরি। করিডোরে থাকতেই লাইব্রেরিয়ানের সাথে দেখা হয়ে গেল। চলে যাচ্ছেন উনি।
" ম্যাম আপনি কি চলে যাচ্ছেন ? "
" হ্যা। কেন ? "
" না আসলে আমি একটু লাইব্রেরিতে যাচ্ছিলাম। "
" ও। তা যাও। ওখানে আকাশ আছে। ওকে বললেই তোমাকে হেল্প করবে। আমি যাই। একটা ক্লাস নিতে হবে তো। " উনি চলে গেলেন।
একটু কনফিউজড হয়ে গেল বর্ষা। তবে শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরির দিকেই এগিয়ে গেল।
রুমে ঢুকে দেখল, সেখানে আর কেউ নেই।কেবল আকাশ বসে বসে মনোযোগ দিয়ে বই এন্ট্রি করছে।
"এক্সকিউজ মি। "
আকাশ লেখা বন্ধ করে ওর দিকে তাকালো।
" বলুন। " একদম সহজভাবে বলল আকাশ।
ওকে এতটা সহজভাবে কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হলো বর্ষা। কারণ আকাশের মত একটা ছেলেকে না জেনেশুনেই ও অপমান করে ফেলেছিল। কাজেই তার তো রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
" আ....এই যে আমার কার্ড।" নিজের লাইব্রেরি কার্ডটা এগিয়ে দিলো বর্ষা।
ওর হাত থেকে কার্ডটা নিলো আকাশ। " কি বই নিতে চান ? "
" আপনার পছন্দমতো একটা দিয়ে দিন। " যেন কিছু না ভেবেই বলে ফেলল বর্ষা।
" হোয়াট ? "
" না..মানে, আপনি তো নিশ্চই জানেন কোন বই কেমন। ভালো দেখে একটা দিন। "
ওর দিকে একবার অনিশ্চিত ভঙ্গিতে চাইলো আকাশ। তারপর আলমারি সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটার অমন অদ্ভুত কথায় ও নিজেই কনফিউজড হয়ে গেছে। কি বই দেবে ? শেষে "দ্য এ্যাম্ফিবিয়ান ম্যান" বইটা বের করে, রেকর্ড করে, মেয়েটাকে দিলো। এরপর আবার বই এন্ট্রি করা শুরু করল।
" আ...শুনুন। "
আবারও রেজিস্টার থেকে মুখ তুলল আকাশ।
" আয়াম সরি। " বর্ষা বলল।
এবারে আগের থেকেও বেশি অবাক হলো আকাশ। " হোয়াই? "
" ঐ যে সেদিন আপনার সাথে আমার ধাক্কা লাগলো। আমি খুবই মিসবিহ্যাভ করেছিলাম। অথচ ফল্টটা আমারই ছিল। " বর্ষা লজ্জিত কণ্ঠে বলল।
আসলে আকাশ কখনোই মেয়েদের দিকে ভালোভাবে তাকায় না। এজন্যই ও বর্ষার চেহারা ভুলে গেছিল। তবে এখন চিনতে পেরে ওর মুখ কিছুটা কঠোর হল। হাতের কলমটা দুই আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল।
" মানুষের উচিত ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া। এখন যেমন আপনি বুঝতে পারছেন যে সেদিন আপনার ভুল ছিল। তাই আশা করব ভবিষ্যতে আর কারো ব্যাপারে না জেনে কোনো মন্তব্য করবেন না। " কথাগুলো বলে আবারও বই এন্ট্রি করতে শুরু করল আকাশ।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল বর্ষা। ঠিক তখনই টিফিন শেষের বেল বাজলো।
বেলের আওয়াজ কানে যেতেই যেন বিদ্যুত খেলে গেল আকাশের শরীরে। প্রথমেই হাতের রেজিস্টার খাতাগুলো গুছিয়ে ফেলল। তারপর খাতাগুলো আর বাইরে থাকা কয়েকটা বই আলমারিতে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে তালা মেরে দিল। তারপর সবগুলো জানালা, লাইট আর ফ্যান বন্ধ করে, বর্ষাকে বের করে রুমে তালা মেরে দিল। আর এসব করতে ওর সময় লাগলো মাত্র তেতাল্লিশ সেকেন্ড।
বর্ষার সব কথা শুনে হাসতে লাগলো ওর বড় বোন তিশা। তিশার বিয়ে হয়ে গেছে। হাসব্যান্ড এ্যাবরোডে থাকে। তাই সে তার বাবার বাড়িতে থাকছে।
" হাসছো কেনো ? "
" আজ পর্যন্ত তুই কোনো ছেলেকে পাত্তা দিস নি। আর আজকে তোর থেকেও বেশি এ্যাটিটিউডের একজন তোকেই পাত্তা দিল না। হাউ কুল ইজ দ্যাট ? " আবারো হাসলো তিশা।
" হুহ কেবল সেদিনের ভুলটা আমার ছিল তাই। নাহলে আমি কেনো একটা ছেলের সাথে সেধে কথা বলতে যাবো ? "
" যাইহোক, তবে তোর আর ছেলেটার মধ্যে কিন্তু অনেক মিল আছে, তাই না ?"
" তুমি কি বোঝাতে চাইছ বলোতো ?" কথাটা
কড়া গলায় বললেও বর্ষার গালদুটো লাল হয়ে গেল।
ক্লাসে তাড়াহুড়ো করে ঢুকলো আকাশ। ব্যাগটা ডেস্কে রেখে জিপার খুলে একটা ফাইল বের করল।
এইসময় রনি, প্রদীপ, রোহান মিলে সাদিমকে ঠেলতে ঠেলতে রুমে ঢুকলো। আকাশকে দেখে হৈ-হৈ করে এগিয়ে এলো প্রদীপ আর রোহান।
" আরে ভাই জানিস না সাদিম আজকে কি করেছে। " বলতে শুরু করে প্রদীপ।
" একটু পরে শুনছি। " আকাশ ওকে থামিয়ে দিল। " এখনই একবার হেডস্যারের রুমে যেতে হবে। সাদিম তুই আয় আমার সাথে। "
হেডস্যারের ক্যাবিনের সামনে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো ওরা। প্রায় সাথে সাথেই স্যার আকাশকে দেখে ভিতরে ডাকলেন।
ভিতরে গেল ওরা। রুমে হেডস্যার ছাড়াও আরো
কয়েকজন স্যার এবং কয়েকজন বাইরের গেস্ট রয়েছেন।
" কি ব্যাপার আকাশ। "
" স্যার BNCCর ( Bangladesh National Cadet Core ) রিপোর্ট দেখাতে এসেছি। "
" তাহলে একটু বসো। " হেডস্যার সোফা দেখিয়ে দিলেন। " ওনাদের সাথের কাজটা শেষ করে নিই। "
স্যার বসতে বললেও দাঁড়িয়েই থাকল ওরা। মাত্র দুই মিনিটের মাথায় ওদের পেছনের দরজার দিক থেকে একটা কণ্ঠ শোনা গেল।
" মে আই কাম ইন স্যার ? "
" এসো। "
অন্য সবার মত আকাশও ঘুরে তাকাল। দেখল কণ্ঠটার মালিককে। সেই মেয়েটা।
বর্ষাও একবার তাকাল ওর দিকে। তারপর নিঃসঙ্কোচে এগিয়ে গেল হেডস্যারের ডেস্কের দিকে। একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।
" স্যার এটা একবার পড়ে দেখুন। "
রুমের সবার সাথে সাথে আকাশও বেশ কিয়্যুরেসিটি ফিল করল।
এদিকে কাগজটা পড়তে পড়তে হেডস্যারের চেহারা চেঞ্জ হতে লাগল। পড়া শেষ করে উনি বর্ষার দিকে তাকালেন।
" কে দিয়েছে এটা ? " কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন।
" শুধু এটাই নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে স্কুল কিংবা প্রাইভেটের পরে বাসায় যাওয়ার সময়ও আমাকে ফলো করে। "
" কে ? নাম বলো। "
" ওই ছেলেটা। " আঙুল দিয়ে আকাশের দিকে দেখাল বর্ষা।
" হোয়াট দ্য হেল আর য়্যু সেয়িং ? " ভীষন অবাক আর কঠোর গলায় বলল আকাশ।
হেডস্যারসহ অন্যান্য স্যাররাও অবাক।
" আকাশ কখনোই এমন কিছু করতে পারে আমি বিশ্বাস করি না। " একজন সিনিয়র স্যার বললেন।
" না না আমি আকাশের কথা বলিনি। " তাড়াতাড়ি বলল বর্ষা। " আমি তো ওর কথা বলেছি। "
আকাশ পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখল সাদিম ওকে কভার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
আজকে বিকেলেও মাঠের সেই স্তম্ভটার উপর বসা ওরা। সাদিম আজ বের হতে চায়নি। কিন্তু ওরা সবাই মিলে ওকে এক হিসেবে বাসা থেকে টেনে বের করেছে।
"............... তো এরপর হেডস্যারের রাগটা একটু কমলো। সাদিমের বাবাকে আর ডাকলেন না। কেবল তার প্রিয় ইলেকট্রিক তারের লাঠিটা ওর পশ্চাদ্দেশে চার-পাঁচবার প্রয়োগ করে ছেড়ে দিলেন। "
আকাশের বর্ণনা শেষ হতেই ওরা সবাই প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়ল।
" আমি তো তোকে তখনই সাদিমের লাভ লেটার দেয়ার কথাটা বলতে গেলাম। " প্রদীপ বলল।
" আচ্ছা এখনের যুগে লাভ লেটার দেয়ার আইডিয়াটা তোকে কে দিল ? " আকাশ প্রশ্ন করলো।
সাদিম বেচারা রাগে, দুঃখে, অপমানে মনে মনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার উপর সবার এসব কথাবার্তা বিষাক্ত কাঁটার মতো গায়ে বিঁধছে।
" কেনো লেটার দিয়েছি তুমি জানো না তাই না ? " ফোঁস করে উঠল সাদিম।
" ও হ্যা মনে পড়েছে। আন্টি তো তোকে একটা Nokia ১১২০ মডেলও কিনে দেয় নি। "
সবাই আরেক চোট হাসলো।
" আচ্ছা আকাশ আরেকটু হলেই তো ওর দোষে তুই ফেসে যাচ্ছিলি। " রোহান বললো।
" মোটেই না। পুরো উপজেলার সবাই জানে ওর ক্যারেক্টার কেমন। স্যাররা কখনোই ব্লেমটা বিশ্বাস করতেন না। " আকাশের হয়ে রনি উত্তর দিলো।
বাড়িতে এসে আকাশ দেখল ওর ফুপাতো ভাই আরাফ এসেছে। খুশিতে ও প্রায় লাফিয়ে উঠলো।
ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হচ্ছে আরাফ। ওর থেকে বয়সে অনেক বড় হলেও ওরা সবকথাই শেয়ার করে।
রাতে এক খাটেই থাকলো ওরা। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করল। এসময় স্কুলের সকালের ঘটনাটাও আরাফকে জানালো আকাশ। তারপর কথায় কথায় বর্ষার সাথে ধাক্কা লাগার ঘটনাও আরাফের অজানা রইল না। সাদিমকে নিয়ে অনেকক্ষণ হাসাহাসি হলো।
" হুমম কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে ঘটনা অন্য দিকে গড়াচ্ছে। " হঠাৎ আরাফ বলল।
" মানে ? " আকাশ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো।
" মানে। মনে হচ্ছে ধাক্কা থেকে শুরু হলেও ব্যাপারটা অনেকদূর গড়াবে। "
" ও আচ্ছা। কিন্তু ভাইজান আপনি কিভাবে সেটা টের পেলেন ? সারাজীবন তো বই-খাতা বাদ দিয়ে কোনো মেয়ের দিকে তাকালেন পর্যন্ত না। কতগুলো আপু কেবল আপনার আশায় থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করে মা হয়ে গেলো। "
" তা তুইও কি আমার পথেই হাঁটার ধান্দায় আছিস না কি ? " মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল আরাফ।
অনেক রাতে একসময় আরাফ ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু আকাশের চোখে তখনও ঘুম নেই। পরের দিন শুক্রবার। তাই ভোরে ওঠার তাড়া নেই।
হঠাৎ আরাফের কথাগুলো আকাশের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। আরাফের সামনে অস্বীকার করলেও এখন বেশ চিন্তায় পড়ে গেল ও। কারণ ওর ব্যাপারে আরাফের কোনো ফোরকাস্ট সাধারণত ভুল হয় না।
এরপর থেকে বর্ষাকে দেখলেই কেমন যেন অদ্ভুত ফিল হতে লাগল আকাশের। একবার ছাড়া দুবার তাকাতে ইচ্ছে করে, ওর কণ্ঠ শোনার জন্য নিজের অজান্তেই কান এলার্ট হয়ে থাকে। আর বর্ষার সামনা-সামনি হয়ে গেলে কিংবা গোপনে তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হয়ে গেলে গাল আর কান গরম হয়ে যায়।
বেতনের ডেটে সাধারণত ক্লাস হয় না। স্টুডেন্টরা এসে কেবল নাম প্রেজেন্ট দিয়ে বেতনসহ যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করে। এতে প্রায় পুরো দিনই লেগে যায়। মাসের এই দিনটা সাধারণত টিচার-স্টুডেন্ট সবার কাছেই পছন্দের। তবে ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
স্কুলের গেট দিয়ে কেবল ভিতরে ঢুকল আকাশ। তখনই টিচার্স কমন রুমের বারান্দা থেকে ওকে ডাক দিলেন লাইব্রেরিয়ান পপি ম্যাডাম। এ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারের ওয়াইফ উনি।
আকাশ ওনার কাছে যেতেই লাইব্রেরির চাবি ধরিয়ে দিলেন।
" অনেকগুলো বই এন্ট্রি করতে হবে তাড়াতাড়ি যা। "
" ম্যাডাম, এই কাজটা রনিকে দিন। আমার ভাল্লাগে না। "
" দেখ কথা না শুনলে কিন্তু তোর স্যারকে বলে দিব যাতে তোর কোনো ফাইন মাফ না করে। আর তোর থেকেও বেতন নিতে বলব। "
" এহ। আমি বৃত্তি পাওয়া ছাত্র। আমার কাছ থেকে কেমনে বেতন নিবে ? "
" তোর যত ফাইন আছে তাতে তিনজনের বেতন দেয়া হয়ে যাবে। এখন কথা না বাড়িয়ে যা। রনিকে আমি পাঠাচ্ছি। "
বেজার মুখে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই এন্ট্রি করতে লাগলো আকাশ। সাধারণত কাজটা রনিই করে। কিন্তু ইদানিং এটা ওর ঘাড়ে চাপছে। অনেকক্ষণ কেটে গেল রনি এল না। একসময় এই একঘেয়ে কাজটায়ও মন বসে গেল ওর। কয়েক ঘন্টা কেটে গেল।
এসময় লাইব্রেরিতে কেউ ঢুকল। আকাশ ভেবেছিল রনি। কিন্তু তাকিয়ে দেখল বর্ষা। ওকে দেখেই আকাশের হার্টবিট বেড়ে গেল।
সহজভঙ্গিতে ওর দিকে এগিয়ে আসল বর্ষা।
" আপনি এখানে একা একা বসে আছেন কেনো ? "
" পপি ম্যাডাম জুটিয়ে দিয়ে গেছেন। তা আপনি এখানে..."
" ভর্তি অনুযায়ী আমার রোল সবার পরে। কাজেই আমার মনে হয় বিকেল পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে। তাই ভাবলাম লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ি। "
" ও। তাহলে বাসায় চলে যেতে পারতেন। পরে আবার এলেই হতো। "
" কেনো ? আমি কি আপনাকে ডিস্টার্ব করছি ? "
" না না আমি... আই ডোন্ট মিন দ্যাট। "
আকাশের নাযেহাল অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে ফেলল বর্ষা।
এদিকে হাসার সময় ওকে এতটাই সুন্দর লাগছে যা দেখে আরো নার্ভাস হয়ে গেল আকাশ।
" আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব ? " কেমন যেন গাঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করল বর্ষা।
আকাশের বুকের মধ্যে ধ্বক করে উঠল। এইরে কি আবার জিজ্ঞেস করে বসে। " বলুন। " বলল ও। নিজের কণ্ঠটা নিজের কানেই কেমন বেখাপ্পা শুষ্ক শোনালো।
" আপনি ক্লাসের ফার্স্টবয় প্লাস ক্যাপ্টেন। স্কুলের স্পোর্টস টিমের ক্যাপ্টেন, BNCC প্লাটুনের কমান্ডার। হেডস্যার থেকে শুরু করে সবার সাথে স্ট্রেটলি কথা বলেন। কিন্তু আমার সামনে এমন নার্ভাস হয়ে যাচ্ছেন কেনো ? "
ডাইরেক্টলি এমন ডাইরেক্ট প্রশ্নের সামনে ভীষণ হেল্পলেস ফিল করল আকাশ।
এমন সময় বাইরে প্রচণ্ড জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগায় শিউরে উঠল আকাশ।
" আসলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে কেমন যেন আনকাম্ফোর্ট্যাবল ফিল করি আমি। "
" কেনো ? "
" মে বি ফর দ্য ল্যাক অফ এক্সপেরিয়েন্স। " অনেকটা নিজেকে বলার মতো করে বলল আকাশ।
" বাট এক্সপেরিয়েন্সে এই ল্যাকটা থাকার কারণ কি ? " ঠোঁটে সামান্য হাসি রেখে আবারো প্রশ্ন করল বর্ষা।
আকাশকে এমনভাবে কোণঠাসা করে যেন অনেক মজা পাচ্ছে।
" লুক য়্যু আর গেটিং ঠু পার্সোনাল। " এতক্ষণে একটু শক্ত অবস্থান নিলো আকাশ। " আপনি এসেছিলেন বই পড়তে। কিন্তু উল্টো আমার অটোবায়োগ্রাফি বের করে নিচ্ছেন।"
" আপনার সেন্স অফ হিউমার তো বেশ স্ট্রং।" আকাশের অবস্থানকে ধ্বসিয়ে দিল বর্ষা। " তো এবার বলুন অনেক দিন ধরেই নোটিস করছি আপনি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন, অন্য রকম বিহ্যাভ করছেন এর কারণ কি ? "
[স্মার্ট পাঠকরা অনেকেই ভাবতে পারেন যে এতো ন্যাকামির কি আছে ? সব তো সেটই। প্রপোজ করে ফেললেই হয়। কিন্তু আকাশ হচ্ছে এমন একটা ছেলে যে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের এড়িয়ে চলে। আর বড় হওয়ার সাথে সাথে পড়শুনা আর কো-কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটিজের সাথে এতটাই জড়িয়ে গেছে যে এই সাইডটায় সোসাইটির সাথে তাল মেলাতে পারে নি। ফলে ঘটে গেছে ল্যাক অফ এক্সপেরিয়েন্স। ]
কি বলবে আকাশ ভেবে পেল না। বর্ষা যেভাবে সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাতে ওর গলা শুকিয়ে কাঠ।
হঠাৎ এই সময় লাইব্রেরিতে ঢুকলো ফাহাদ আর তামিম। ওদের দুজনকে বেশ এক্সাইটেড দেখাচ্ছে।
" মামা এইসব বই-খাতা রেখে এক্ষণি নিচে চল। " ফাহাদ আকাশকে বলল।
" কেনো ? " একটু অবাক হলো আকাশ।
" এই বৃষ্টির জন্যে আজকে আর বেতন নেবে না। কিন্তু কেউ তো এরমধ্যে বাসায় যেতেও পারছে না। তাই হেডস্যার বলেছেন আমাদের কাবাডি খেলা দেখবেন। এ্যাসেম্বলির মাঠেই খেলবো। "
" সত্যি। " প্রায় লাফিয়ে উঠলো আকাশ। এখন ওকে দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে মাত্র এক মিনিট আগে ও কি পরিমাণ নার্ভাস ছিল।
আকাশ নিচে এসে দেখলো সত্যিই এক্সাইটিং ব্যাপার। হেডস্যারসহ যতজন টিচার আর স্টুডেন্ট ছিল সবাই একাডেমিক বিল্ডিংয়ের নিচতলার বারান্দায় ভীড় করে আছে।
রেগ্যুলার প্লেয়ারদের নিয়ে দুটো টিম করে নিয়ে খেলা শুরু হতে যাচ্ছিল। এমন সময় স্কুলের ভোকেশনালের কিছু ছাত্র এসে ওদের চ্যালেঞ্জ করল। ফলে এক্সাইটমেন্ট আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
এবারে একদলে থাকলো ভোকেশনালের দানব সাইজের ছাত্ররা। অন্যদলে রইল আকাশ, ফাহাদ আর তামিমসহ রেগ্যুলার প্লেয়াররা।
আকাশ সেরা প্লেয়ারদের মধ্যে একজন হলেও ছোট ক্লাসের হওয়ায় ওকে এই খেলায় ক্যাপ্টেন করা হলো না। যদিও এটা ওর পার্ফমেন্সে কোনো ইফেক্ট করলো না।
যাইহোক প্রচুর এক্সাইটমেন্টের মধ্যে দিয়ে খেলা শেষ হলো। হাড্ডাহাড্ডি কন্টেস্টের পর আকাশরাই জিতলো। আকাশ যে কি রকম খেললো তা সবাই ইমাজিন করে নিন।
খেলার শেষে বৃষ্টির জোর একটু কমে এলে একে একে স্কুল ত্যাগ করলো। শেষ পর্যন্ত কেবল রয়ে গেল আকাশ আর বর্ষা।
বর্ষা আবারও তখনের অসমাপ্ত কথা শেষ করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু তখনকার থেকে ডিফারেন্স এই যে, আকাশ এখন আর নার্ভাস নয়।
" আমার প্রশ্নের এ্যান্সারটা কিন্তু এখনো পেলাম না। " বর্ষা বলল।
" ওকে এ্যান্সারটা আমি এখনই দিচ্ছি। বাট তার আগে আপনি আমার একটা প্রশ্নের এ্যান্সার দিন। "
" কি প্রশ্ন ? বলুন। " বর্ষা বলল।
" আপনি কি সবসময়ই ছেলেদের সাথে এভাবে ফ্রিইলি কথা বলেন ? "
এবার আকাশের প্রশ্নে বর্ষার কানদুটো লাল হয়ে উঠলো। চুপ করে মাথা নিচু করে রইল সে।
" হারি আপ। টু আন্সার য়্যোর কোয়েশ্চেন আই নিড টু নো য়্যোর আন্সার। " আকাশ তাড়া দিলো।
" না। " ছোট্ট করে উত্তর দিলো বর্ষা।
" তাহলে আমার সাথে যে অত্যন্ত বেশি স্মার্টনেস দেখালেন। এটা কি ? " ভ্রু নাচালো আকাশ।
" বিশ্বাস করুন আপনার গত কদিনের বিহ্যাভ দেখে আমি একটা ধারণা করেছিলাম। আর আপনাকে অন্য যে কারো থেকে আলাদা মনে করেছিলাম। শুধুমাত্র তাই এমনটা করতে পেরেছি। "
" কথাগুলো কি পুরোপুরি সত্যি ? "
লজ্জায় বর্ষার গালদুটো একদম লাল হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে কেবল বলল, " হ্যা। "
আকাশ হাত বাড়িয়ে ওর থুতনি ধরে ওর মুখটা উচু করে, সরাসরি ওর চোখের দিকে চাইল।
" তাহলে শুনুন ম্যাডাম, আপনার ধারণাটা সম্পূর্ণ সঠিক। " আকাশ সামান্য হেসে বলল।
Writer:
Nil Ahmed
No comments:
Post a Comment