Like a love story...

Like a Love Story...


শীতের ভোর। ঘুমটা জমে উঠেছিল। কিন্তু হতচ্ছাড়া ঘড়িটা বেজেই চলেছে। কানে বালিশ চাপা দিল স্বপ্নীল। নাহ, কিছুতেই ঘুমানো যাচ্ছে না। লেপের ভিতর থেকে হাত বের করতেই হল। চোখ বুজেই ঘড়িটা টিপে চলল ও। কিন্তু কিছুতেই সুইচটা খুজে পেল না। ধ্যাৎ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ছুড়ে মারল ঘড়িটা। দেয়ালে লেগে কয়েক খন্ড হয়ে নিঃশব্দ হয়ে গেল ওটা।
মায়ের ডাকাডাকিতে উঠতেই হল। 'এগুলো কি?' ঘড়ির টুকরোগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল মা। 'কি করব? কিছুতেই বন্ধ হচ্ছিল না।' চোখ ডলতে ডলতে উত্তর দিল ও।
'এই দিয়ে আঠারোটা ভাঙ্গলি।'
'মনে হয়।'
'রাতে এ্যার্লামটা বন্ধ করেই শুতে পারতি।'
'মনে ছিল না।'
'এখন উঠে পড়। অনেক বেলা হয়ে গেছে। ডায়নিং টেবিলে চলে আয়।'
মা চলে গেল। স্বপ্নীলও উঠে পড়ল। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর জামা-কাপড় পাল্টে এসে নাস্তা করতে বসল। বাবা বসে চা খাচ্ছে, হাতে খবরের কাগজ। ওর বাবা একজন আর্মি অফিসার। বেশ লম্বা ছুটি নিয়ে এসেছেন এবার। লম্বা-চওড়া লোক তিনি। মেদহীন দেহ, ক্লীনশেভড মুখ আর মাথায় মিলিটারি কায়দায় ছাটা চুলের মধ্যে একটাও পাকা চুল নেই। এখনো পাঞ্জায় স্বপ্নীলকে হারিয়ে দেন।
' আজকে তোর কোন কাজ আছে।' মা জানতে চাইল।
'না কেন?'
'তোকে তোর নানা বাড়ি যেতে হবে।'
'কেন?' বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল ও।
'ও বাড়িতে আজ একটা অনুষ্ঠান আছে। তোর বাবা আর আমি একটু বেরোব। তাই তোকে যেতে হবে। খাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি পারিস রওনা দে।'
আবার ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। প্রথমত কোথাও একা যাওয়া ওর একদম পছন্দ নয়। তাই যখনই যেখানে যায় লাবিবকে টেনে নিয়ে যায়। ছেলেটার ধৈর্যের প্রশংসা না করে পারা যায় না। সব সময়ই ওর অত্যাচার সহ্য করে। একেই বলে খাটিঁ বন্ধু। কিন্তু আজ তাকে পাওয়া যাবে না। কারন আজ সে তার বিশেষ কাওকে সঙ্গ দেবে। মনে হচ্ছে অলককেই নিয়ে যেতে হবে। সে ব্যাটা এক কঠিন চিজ।  আল্লাহর দুনিয়ায় মেয়েদের পিছে ঘোরা ছাড়া ওর আর কোনো কাজ নেই। তবে আজ অবধি কোনো মেয়ের কাছে পাত্তা পায় নি বরং যত মেয়ের কাছ থেকে অপমান হয়েছে সে লিস্ট ক্রমশ লম্বা হয়ে চলেছে। তবু ব্যাটার কোন লজ্জা নেই।
দিত্বীয় কারনটা হচ্ছে এই অনুষ্ঠান, বেশী লোকজন ওর একদম ভালো লাগেনা। তবে অলককে নিয়ে গেলে ও ব্যাটার পোয়া বারো। কারন বেশী মানুষ মানে বেশী মেয়ে।
নানাবাড়ি এসে স্বপ্নীল ভীষন বিরক্ত। লোকজনে গিজগিজ করছে। যাদেরকে কস্মিনকালেও দেখে নি তারা এসে গায়ে হাত দিচ্ছে। আর মুখে কমন ডায়লগ," ওমা আমাদের আয়শার ছেলে! কত্ত বড় হয়ে গেছে। কেমন আছ নানা, কেমন আছ বাবা, কেমন আছ মামা। আমি তোমার অমুক, আমি তোমার তমুক......''অসহ্য। বেশ কিছু বুড়োবুড়ি আবার উল্টোপাল্টা রসিকতাও  করল। এদের ওপর ও সবচেয়ে বেশী বিরক্ত। বয়স হয়েছে অথচ না আছে কোনো ব্যাক্তিত্ব না আছে গাম্ভীর্য। মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। অন্যদিকে অলক গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটা মেয়ের কাছ থেকে অপমান হয়েছে। অথচ ও সে সব গায়েই মাখছে না। একজনকে ছেড়ে আরেকজনের পিছে যাচ্ছে। একটা চেয়ার নিয়ে সবার থেকে দূরে বসল স্বপ্নীল। মেজাজ খারাপ মাপার মিটার থাকলে আর এই মূহুর্তে সেটা দিয়ে ওর মেজাজ মাপলে মিটারটা সাথে সাথে ব্লাস্ট হয়ে যেতো। লোকজনের ভিড়ের দিকে একবার কড়া চোখে চাইল। একটা মেয়ের ওপর ওর চোখ আটকে গেল। মেয়েটা ওর দিকেই চেয়ে আছে। ও সাধারণত কোন মেয়ের দিকে চোখ পড়লে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু এই মেয়েটার দিক থেকে সরাতে পারল না। মেয়েটার মধ্যে কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। অন্য সব মেয়েদের মত ওর মুখে কোন মেক-আপ নেই। একদম সাধারণভাবে আছে। কিন্তু ওকেই মনে হয় সবার চেয়ে সুন্দর লাগছে। বাচ্চাদের মত সরলতা ভরা দুটো সুন্দর চোখ, পাতলা ঠোঁট, আর একমাথা কালো চুল প্রায় কোমর পর্যন্ত। সুন্দর একটা সাদা ড্রেস পরা, মোটেও অন্যদের মত উগ্র নয়। এক কথায় অপূর্ব। হঠাৎ স্বপ্নীল অন্যদিকে  মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। তারপর আবার চাইল। মেয়েটি চলে গেছে। একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল। হঠাৎ ওর কেমন যেন এক অদ্ভুদ অনুভূতি হল। নিজেই ভাবতে লাগল সবাই ওকে যতটা রুড মনে করে ও তাহলে ততটা রুড নয়। এমনকি ও নিজেও মনে করত ও পুরোপুরি লাভপ্রুফ। এমনকি ওর যে সব বন্ধুদের রিলেশন আছে তারা ওর উপহাসের পাত্র। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মূহুর্তের মধ্যে একি হল ওর। নিজের বুকে হাত দিল ও। হৃদযন্ত্রটা রেসের ঘোড়ার মত ছুটা আরম্ভ করেছে। এমন সময় ও দেখল এক বুড়ো ওর দিকেই আসছে। তাই ও তাড়াতাড়ি উঠে বাগানের দিকে হাটা ধরল। চোখে পড়ল অলক এক আটা ময়দা কন্যার পিছে ঘুরছে।
বাগানটা অনেক বড়। সবই কাঠের গাছ। এদিক ওদিক হাটতে লাগল ও। বুকের মধ্যে ঝড় বইছে। কে  এই মেয়েটি? আর তার জন্য ওই বা কেন এমন পাগল হয়ে উঠল? ইজ ইট কলড লাভ? ও বলে উঠল-
"Oh! My soul-
Have You fall in love?
Then imagine a dove
with a rose
Look what it shows?
It gives withness-
That you love her face."
নিজের মনের উপর যেন ওর কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। বহুবার চেষ্টা করল এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। কিন্তু মেয়েটার অবয়ব যেন আরো স্পষ্ট হতে লাগল ওর মনের মধ্যে। হঠাৎ টের পেল ওর পেছনে কেউ দাড়ানো। ঘুরে দাড়িয়ে ভীষণ চমকে গেল ও। ওর সামনে সেই মেয়েটি দাড়ানো। ও মনে করল ওর কল্পনা। কিন্তু ওর ধারনা ভূল প্রমাণিত করে মেয়েটি হাসল।
'আপনি এখানে?' অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল স্বপ্নীল।
" আপনাকে আমার মা ডেকেছেন।' উত্তর দিল মেয়েটা।
'আপনার মা আমাকে চেনেন?'
সুন্দর করে হাসল মেয়েটি। '  আমার মা আপনার মায়ের ফুফাত বোন।'
'ও, আপনি তাহলে রিমি খালার মেয়ে। মা খুব বলে রিমি খালার কথা।' 
'তাহলে তো নিশ্চয়ই এটাও বলেছেন যে রিমি খালার কোনো মেয়ে নেই। তাঁর তিন ছেলে।'
'তা....তাহলে?' ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল স্বপ্নীল।
'আমার মায়ের নাম মিতু।'
' ও হ্যা...আমি তার নামও শুনেছি। তা চলুন।
'আ... আসলে মা একটু পাশের বাড়িতে গেছে।' 
স্বপ্নীল অবাক হয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে চাইল।
'আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে একটু আগে এসেছি।
"ও।"
'কিছু মনে করবেন না। আমি সাধারণত ছেলেদের এড়িয়ে চলি। কিন্তু আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল।'
'কেন? আমিও তো আর সবার মতোই।'
'মোটেও না। আপনার ওই বন্ধুটার কথাই ধরুন সারাক্ষণ কেমন মেয়েদের পিছে ঘুরছে।  কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি আপনি কোন মেয়ের দিকে একবারও পর্যন্ত তাকাননি। আপনার এই বিশেষ গুনটি চোখে পরার মত।'
'থ্যাংকস।' যাই হোক হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল ও। 'আমি স্বপ্নীল।'
মেয়েটা প্রথমে একটু দ্বিধা করল। তারপর হ্যান্ডশেক করে বলল, 'আমি নিশি'।
বেশ কিছুক্ষন ওরা বাগানে ঘুরল। গল্প করার ফাকে ফাকে আপনি থেকে তুমি পর্যায়ে এসে গেল।

ব্রেকফাস্ট করছে স্বপ্নীল। নানাবাড়ি থেকে এসেছে তিনদিন। কিছুতেই নিশির কথা ভুলতে পারছে না। নিশির নাম্বারটা হারিয়ে ফেলেছে। ওকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু সম্ভব না। কথাটা কারো সাথে শেয়ার  করতেও পারছে না। এমনকি লাবিবের সাথেও না। কারন এতদিনের ইমজটাই বা নষ্ট করে কিভাবে? তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। মায়ের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ল। 'খাওয়া শেষ করে বাজারে যা।' সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল স্বপ্নীল। বাজারের লিস্ট ও বেশ অবাক হল। ' মা এত কিছু কেন আনতে হবে?'
'আজ তোর মামারা আসবে।'
নানাবাড়ির কথা শুনে ওর মন আরো খারাপ হয়ে গেল।
কলিং বেল বাজলো। স্বপ্নীলের মা গিয়ে দরজা খুললেন। একে একে ঘরে ঢুকল স্বপ্নীলের বড় মামা, বড় মামী, মেজ খালা। তারপরের জনকে দেখে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "মিতু তুই!" তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপরের জনকে দেখে বললেন,"ওমা নিশি কত্তো বড় হয়ে গেছে! আর কত সুন্দর হয়েছে।"
নিজের ঘরে বসে দেয়ালের দিকে চেয়ে নিশির কথা ভাবছিল স্বপ্নীল। হঠাৎ একটা গলা শুনে লাফিয়ে উঠল। নিজের কানকে বিশ্বাস না করে দৌড়ে গেল। নিশিকে দেখেও যেন চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।

স্বপ্নীল দেখলো নিশির ব্যাপারে ওর একটা ধারনা সম্পূর্ণ ভূল। ও ভেবেছিল নিশি খুব শান্ত। কিন্তু দেখা গেল সে একটা পাচঁ বছরের বাচ্চার মত চঞ্চল। সারা বাড়ি মাথায় করে ফেলল। প্রত্যেকের পিছনে লাগল। হাসিমুখে সহ্য করল ওর সব ছেলেমানুষী অত্যাচার। বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা দিয়ে দুপুরে ঘুমাতে গেল স্বপ্নীল। কিন্তু বিকেল হওয়ার অনেক আগেই ডাকাডাকি শুরু করল নিশি। স্বপ্নীল উঠতে চাইল না। নিশি চলে গেল। স্বপ্নীল নিশ্চিন্তে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। নিশি ফিরে এল হাতে এক পানিভর্তি বালতি নিয়ে। পুরো বালতি পানি ঢেলে দিল স্বপ্নীলের উপর। লাফিয়ে উঠল সে। নিশি দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইল। আর পানিতে পিছলে গেল। কিন্তু সময়মত তাকে ধরে ফেলল স্বপ্নীল। আরেকটু হলেই টেবিলের কোনায় লাগত নিশির মাথা। একটা বড় দুর্ঘটনা থেকে বেচে গেল সে। স্বপ্নীলের রুমে ওর বাবা আসছিলেন কোন কারনে। এসে দেখলেন স্বপ্নীলের সারা শরীর ভেজা, সে ধরে আছে নিশিকে আর নিশির দুই হাত স্বপ্নীলের চওড়া দুই কাধে। তিনি ছোট একটা কাশি দিলেন। বাবা ছেলের চোখে চোখ পড়ে গেল। ওর বাবা মুচকি হেসে চলে গেলেন।
বিকেলে বেরিয়ে অনেকক্ষন ঘুরলো স্বপ্নীল আর নিশি। সন্ধা হওয়ার একটু আগে স্বপ্নীল নিশিকে বলল," চল তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই।" বেশ সুন্দর একটা জায়গায় আসলো ওরা। একটা মাটির রাস্তা। সামনে অনেক নিচে একটা নদী। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। তার কমলা আভা পড়েছে নদীর পানিতে। আর মনে হচ্ছে সূর্যটা যেন নদীর পানিতেই ডুবে যাচ্ছে। সে দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল নিশি। বাতাস উড়ছে ওর রেশমী চুল। সেগুলো সামনের দিকে চলে আসছে। আবার মাঝে মাঝে স্বপ্নীলের মুখে আদর করছে তার চুল। প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ নিশি। নিশির রূপে মুগ্ধ স্বপ্নীল। কিন্তু তারা টের পেল না তারা দাড়িয়ে আছে একে অপরের হাত ধরে।
       রাতে খাবার টেবিলে বসে অপ্রাসঙ্গিকভাবে স্বপ্নীলের বাবা বলে উঠলেন," ছেলেটা হঠাৎ বড় হয়ে গেল।" স্বপ্নীল পানি খাচ্ছিল। বাবার কথায় তার বিষমলেগে গেল। স্বপ্নীলের মা ভ্রু কুচকে বললেন, 'বড় হয়ে গেল মানে? কেবল তো এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। কি বলছ তুমি?' বাবা আর কোন কথা বললেন না। মাও আর কথাটা নিয়ে ভাবলেন না। ছোটবেলার সাথি ফুফাত বোনকে পেয়ে সব ভুলে গেছেন। শুধু স্বপ্নীল একবার কড়া চোখে বাবার দিকে তাকাল। বাবা মুচকি হেসে ওকে থাম্বস আপ করলেন। ও বুঝলো ওর বাবা বলছে,' গুড চয়েজ। বেস্ট অফ লাক মাই বয়।' ও হাসল নিঃশব্দে।
       সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। নিশি স্বপ্নীলের রুমে বসে গল্পের বই পড়ছে। স্বপ্নীল ল্যাপটপে একটা প্রোগ্রামিং করছে।
"স্বপ্নীল।"
"বলো"
"আজ বাইরে কুয়াশা নেই আর খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।" চল হেটে আসি। স্বপ্নীল ঘড়ি দেখল। "এখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। আর শীতের রাত সাড়ে এগারোটা মানে বোঝ?"
"তো কি হয়েছে? চল তো।"
"সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।"
"তুমি যাবে কিনা তাই বলো?"
অনিচ্ছাসত্তেও উঠলো স্বপ্নীল। "চল ভাল পাগলের পাল্লায় পড়েছি।" বিড়বিড় করে বলল ও।
"কি বললে?"
"না কিছু না। চল দেখি জাহান্নামের ট্রেনের ফার্স্টক্লাস টিকিট পাওয়া যায় কিনা? শীতের মধ্যে যত্তসব।"

চাঁদের আলোয় বড় রাস্তা ধরে হাটল ওরা। নিশি খুব খুশি। কিন্তু শীতে স্বপ্নীলের অবস্থা খারাপ।
"স্বপ্নীল চলো সন্ধ্যার সেই জায়গায় যাই।"
স্বপ্নীল চোখ কপালে তুলে বলল," মনে হয় তোমার মাথায় তার একটাও আস্ত নেই। এত রাত্রে কি পাগলামি শুরু করলে।"
"প্লিজ চল। আর তোমার এখন কাজই বা কি আছে, গিয়ে তো ঘুমাবে আর মোটা হবে।"
"মোটা?" একবার নিজের মেদহীন ব্যায়াম করা শরীরটা দেখল স্বপ্নীল।
"মোটা না হলে। তাই বলে এত সুন্দর রাতটা ঘুমিয়ে নষ্ট করবে?"
"বেশ। তাহলে পা চালাও। কালকেই না হয় সকাল সকাল পাবনার দিকে রওনা দেব।"
নিশি কোনো উত্তর না দিয়ে হাটতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে কিছুতে হোঁচট খেয়ে পা মচকালো ওর।
"কি সাধ মিটলো? ফিরে চল।"
"না। আমি যাবই।"
"কিভাবে? একপা ও তো আর যেতে পারবে না।"
নিশি চুপ করে রইল।
"তোমার ওজন কত?"
"কেন?" অবাক হল নিশি।
ওকে পাজকোলা করে তুলল স্বপ্নীল। তারপর হাঁটতে লাগল। নিশি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল।
কিছু দূর গিয়ে স্বপ্নীল টের পেল কাজটা ঠিক হয়নি। নায়ক সাজতে গিয়ে এখন তো জান বেরিয়ে যাবার অবস্থা। নামানোও যাবে না। প্রেস্টিজের ব্যাপার। যাক কোনো মতে সেই রাস্তাটায় পৌছে গেল। নামিয়ে দিল নিশিকে। চারদিকের প্রকৃতি দেখে পায়ের ব্যাথা ভুলে গেল নিশি।
আকাশে গোলাকার চাঁদ। চাঁদের আলো ভাসছে নদীর পানিতে। সেই সাথে অসংখ্য তারার আলো। দূরে পানির একটু উপরে খুবই পাতলা কুয়াশার স্তর। নির্বাক হয়ে গেল নিশি।
"স্বপ্নীল, কি সুন্দর তাই না?"
'নিশি।'
'বলো।'
আবৃত্তির মত করে বলল স্বপ্নীল-
"Every time I see into your eyes,
I can see my Paradise.
Stars are shining in the sky.
Like the words of desire."
'মানে?'
"I love you."
নিশি একবার ওর মুখের দিকে চাইল তারপর একটু হাসল।
"I love you too."
"তুমি কোন প্রশ্ন করবে না?"
"না।"
"কেন?" একটু অবাক হল স্বপ্নীল।
সাথে সাথেই নিশি ওকে জড়িয়ে ধরল। কারন আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।
স্বপ্নীলও ওকে জড়িয়ে ধরল।
আকাশের চাঁদকে একটু নীলচে মনে হল। অনেক দূর থেকে ভেসে আসলো কোনো ভবঘুরের মৃদ্যু বাঁশির সুর। ......................
The End....
writer: Nil Ahmed
©Copyright 2018 storylandBD
STORYLANDBD
STORYLANDBD

This is a short biography of the post author. Maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec vitae sapien ut libero venenatis faucibus nullam quis ante maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec.

1 comment:

  1. Love this story. I need more love stories.

    ReplyDelete