Bangladeshi Boy Vs Pakistani Girl




 সময়টা ২০০৬ সাল। আমেরিকাতে এসেছি প্রায় তিন বছর হতে চলল। একটি আই-টি কোম্পানিতে কাজ করছি। ভালোই কাটছিল আমার দিনগুলো। হঠাৎ একদিন, আমি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে দূর থেকে দেখতে পাই কিছু ড্রাগ এডিক্টেড একটি মেয়ের ব্যাকটা টানা টানি করছে  এবং আমি সেই জায়গায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তারা ব্যাগ নিয়ে চলে যায়। মেয়েটি  ভীষণ কান্না জুড়ে দেয় এবং সে বলে সেই ব্যাগে তার পাসপোর্ট ও ভিসার সব কাগজপত্র ছিল। সে তার দেশে কিভাবে ফিরবে। সে একজন  পাকিস্তানি মেয়ে।  সে আমেরিকাতে এসেছিল বেড়াতে এবং পরদিন তার ফ্লাইট ছিল পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার।  এখন সে তার পাসপোর্ট-ভিসা সব হারিয়ে ফেলল এবং তার সব টাকাও ছিল ওই ব্যাগে।

 এবার আমি তাকে বললাম," আপনি ভয় পাবেন না। আমি  এখানে তিন বছর ধরে আছি। আপনি কাঁদবেন না আমরা পুলিশের কাছে যেতে পারি এখানে পুলিশ খুবই সাহায্য করেন আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।" 

 এতক্ষন আমাদের কথা ইংরেজিতে হলেও যেটা আমি বাংলাতে লিখেছি। এখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো হিন্দি পারেন তাই না তাহলে আমরা হিন্দিতে কথা বলতে পারি। হিন্দিটা আমার ভালোই আয়ত্তে ছিল। 

 তারপর সেখান থেকে সে আর আমি পুলিশ স্টেশন গেলাম। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে আমরা সেখান থেকে চলে আসলাম। এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার এখানে কেউ আছে থাকার মত? আমাকে না সূচক উত্তর দিলো এবং মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো। তারপর বললো এতদিন  হোটেলে ছিলাম এখন হোটেলের বিল কিভাবে পরিশোধ করবে বুঝতে পারছিনা। 

- আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস করেন। তবে আপনি আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকতে পারেন। যতদিন  আপনি পাকিস্তান ফিরতে না পারেন। 
- না দেখুন আমি তা পারবো না।
- আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন আর আপনি হোটেলে থাকতে গেলে আপনার অনেক টাকা লাগবে।
- সেটা আমি ভেবে দেখব কিন্তু আমি এখন কিভাবে দেশে ফিরতে পারি?
- আজ এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে কাল আপনাকে নিয়ে পাকিস্তান এম্বাসিতে যাব তারপর তারা বলবে কি করা যায়।
- তাহলে চলুন  হোটেলে চেক আউট করে আসি আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের সব টাকা দেয়াছিল।

 তারপর তাকে নিয়ে আমার বাসায় আসলাম সে অনেক লাজুক এবং পর্দাশীল আর আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি সে বারবার বলছে আমি পাকিস্তানে গিয়ে আপনার সব টাকা দিয়ে দিব তবে আপনার ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবো না।

- আপনি নিচতলায় থাকুন আমি দুই তলায় থাকি আমার বাসাটা দোতলা এবং আমি একাই থাকি আগে কিছু বন্ধু ছিল এখন ওরা নেই।

- আমি আপনার বাসার সব কাজ করে দেবো শুধু বসে বসে খেতে পারব না।

- না না  আপনি আমার মেহমান। আপনি কেন কাজ করবেন। এখন আপনি নিজের ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে।

- আচ্ছা ঠিক আছে।

নিচতলায় টেবিলে খাবার পরিবেশন করেছি। রান্নাটা আমি নিজে ভালই পারতাম। আর বাইরে খেতাম বেশীরভাগ সময়। এবার সে এসেছে  খেতে। এতক্ষণ পর আমি তাকে দেখতে পেলাম। এতক্ষণ তার মুখ ঢাকা ছিল। আমি তাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না সে অসম্ভব সুন্দরী।  টানা টানা তার দুটি চোখ, কালো লম্বা চুল, গায়ের রং দুধের মত সাদা তাকে দেখে আমি বাকরুদ্ধ। এবার সে এসে বলল-

- এতো কিছু হয়ে গেল এখনো কেউ কারো নাম জানিনা।
- আমি ফারহান এবং একজন বাংলাদেশি।
- আর আমি ফারাহ খান।
- আামাদের নামে কত মিল আছে দেখেন।
-হাহাহা সত্যি তাই। 
তার হাসিটা অপরুপ সুন্দর। তাকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। 

- এতকিছু কি আপনি রান্না করেছেন?
-হ্যাঁ।
- বাহ আপনি অনেক কিছু পারেন। আপনার বউ অনেক ভাগ্যবতী। আপনার মতো কাউকে পেয়েছে। 

-হাহাহা আমিতো এখনো বিয়েই করিনি।

-ওহ করবেনতো কখনো। যে হবে সে খুব ভাগ্যবতী হবে।

 পরদিন সকালে আমি উঠে তাকে জাগিয়ে বললাম,

- আমি অফিসে যাচ্ছি তাড়াতাড়ি ফিরব আপনি তৈরি থাকবেন। তারপর পাকিস্তান এম্ব্যাসিতে যেতে হবে। আর  খাবার আছে একটু গরম করে খেয়ে নেবেন। 
- আচ্ছা ঠিক আছে। 

 অফিস থেকে ফিরে পাকিস্তান এম্বাসিতে গিয়ে জানতে পারি সব ঠিক হতে তিন মাস সময় লাগবে। এটা শুনে ফারাহ  একটু বিচলিত হয়ে পড়ল। 

- আচ্ছা আমি এভাবে এতদিন কিভাবে থাকবো বলতে পারেন। বাবা জানতে পারলে  খুব বকবে।  আমাকে একা আসতে  দিতে চাইনি এখন বাবার কাছে টাকা চাইতে গেলে অনেক কিছু শুনতে হবে। 

- আপনি না হয় আমার বাসাতেই থাকুন।
-না না তা কি করে হয়।
 -আচ্ছা আপনার কাছে কি অন্য কোন অপশন আছে বলুন।
- আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমি দেশে ফিরে আপনার টাকা দিয়ে দিব।
- আচ্ছা শেষ দেখা যাবে তবে আগে আপনি কিছু শপিং করে নিন তিনটা ড্রেস পড়ে কিভাবে এতদিন থাকবেন?
- না না আমার ওতেই  হবে আপনার আর টাকা নষ্ট করতে পারবোনা। 
- আচ্ছা মনে করেন এটা আমার উপহার। আচ্ছা আপনি এটার টাকাও না হয় দিবেন।  এবার তো চলুন।

-আচ্ছা। 

 একটা শপিং মলে গিয়ে বললাম আপনি কিনুন আমি আছি শপিং শেষে বাসায় ফিরে বললাম,

- আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিচ্ছি।

- তার আগে বাবাকে কি বলব বুঝতে পারছি না।

- বলুন যে, এখানে ভার্সিটিতে একটি শর্টকোর্স করবে জার্নালিজমের উপরে।

-Good Idea.  আপনার ফোনটা একটু দিবেন আমার ফোনও নিয়ে গেছে কাল।

-এই নিন।

পরদিন সকালে উঠে আমি অফিসে চলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আমার পুরো বাসা গোছানো। যেই অগোছালো  মানুষ আমি। একসাথে দেখি টেবিলে খাবার পরিবেশনও করে রেখেছেন। 

- শুনুন এখন থেকে আপনাকে নিজে রান্না করতে হবেনা আর বাইরে থেকেও খাবার আনাতে হবে না।

- আপনি কেন এসব করতে গেছেন।

- তাতে কি আপনার বাসায় থাকব আর এটুকু যদি করতে না পারি। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন।

 খেয়ে দেখলাম তার রান্না অসাধারণ।

- আপনার হাজব্যান্ডও অনেক ভাগ্যবান হবেন।

- আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি অবিবাহিত?

- বিবাহিত হলে অবশ্যই আপনাকে এখানে একা আসতে দিতো না।

-হুম তা ঠিক।

-ছাদে যাবেন?

-চলুন।

 ছাদে আসার পর......

- কত সুন্দর আকাশটা তাইনা বলুন। ফারহান বলল।

-  হুমম অনেক সুন্দর।  আচ্ছা আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই?

-নাহ। আপনার বয়ফ্রেন্ড নেই?

-নাহ। অবশ্য আপনাকে আমার বিশ্বাস হয়না।

- বিশ্বাস না হওয়ার কিছুই নেই কাউকে কখনো  ভাল লাগে নি আর আমাকে কেই বা ভালবাসবে।

- বাসবে বাসবে কেউ কখনো চিরকুমার থাকে না। আর আপনি যে সুদর্শন পুরুষ আপনাকে অনেকেই ভাসবে।

- থাক আপনাকে আর পাম দিয়ে আমাকে ফোলাতে হবে না।

- মোটেই না আপনি একটু বেশি বুঝেন তাই।

- আচ্ছা আমরা ঝগড়া না করি।

- আপনার সাথে ঝগড়া কে করে হুহ।

 মনে মনে ভাবছি তাকে রাগলেও কত সুন্দর লাগে।

- কি ভাবছেন আপনি? ফারাহ বলল। 

- ভাবছি আর কিছুদিন পরেই আপনি চলে যাবেন আর আমাকে ভুলে যাবেন।

- এমন কেন মনে হয় আপনার কখনোই না যে আমার এত উপকার করল তাকেই ভুলে যাব? কখনো  না।

-তাই বুঝি।

-হুম তাই।


 সন্ধ্যায় দেখি সে চা নাস্তা সাজিয়ে বসে আছে। এমন সময় আমার একটা ফোন আসলো জারা আপুর ফোন...

- কিরে ফারহান কেমন আছিস?

- হুমম ভালো আছি তুমি কেমন আছো।

- তোর তো কোন খবরই পাই না আজকাল প্রেম করিস নাকি। আর বিয়ে কবে করবি?

-তুমি যেদিন করাবে বিয়ে। 

 আমাদের কথা শুনে ফারাহ বলে উঠল আপনার গার্লফ্রেন্ড নাকি। আমি না বলাতে আমার হাত থেকে টান দিয়ে ফোন নিয়ে দৌড় দিল ফারাহ।

- ওই ফোন দিন ওটা আমার গার্লফ্রেন্ড না।

- দেবোনা দেবোনা হাহাহোহো।

 ওর পিছু পিছু দৌড়ে ওকে ধরতে গিয়ে ওর ওড়নায় বেঁধে আমি ওর উপরে পড়ে গেলাম। ওকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই এত কাছে থেকে আগে কখনো ওকে দেখিনি।  ওকে যতই দেখি অজানা এক রাজ্যে হারিয়ে যাই। হারিয়ে যাই এক স্বপ্নে।  যখনই বুঝতে পারি আমি এখনো উঠেনি তাড়াতাড়ি উঠে পড়ি।

- সরি আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি।

- ইটস ওকে।


রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, ফারাহ এর প্রতি কেন জানি অন্যরকম টান অনুভব করেছি। তবে কি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।  না কি ভাবছি।

 এভাবে আমাদের খুনসুটির মধ্যে দিয়ে কখন যে তিন মাস কেটে গেল টেরই পেলাম না। ফারাহর যাবার দিন চলে আসলো।  ওকেএয়ারপোর্টে ছেড়ে আসলাম। 

বাসায় ফিরে আসার পর থেকেই খালি খালি লাগতে শুরু করলো।  আশ্চর্য আগেও তো আমি একাই থাকতাম এমন তো কখনো লাগেনি তবে কি হলো আজ।

 ও চলে যাবার পর থেকে কোন কাজে মন বসাতে পারছিলাম না।  ওর বলা কথাগুলো কানে বাজত। ভাবলাম বাংলাদেশে চলে যাই, হয়তো ভুলে যাব। আর কেমন মেয়ে এতদিন হয়ে গেল একটা ফোন দিয়ে জানলো না কেমন আছি।

 দেশে ফিরে এসেছি আজ এক মাস হল। শুধু তাকেই খুঁজে বেড়ায় সব জায়গায়। এবার ভাবলাম কিভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ওর তো ফোন হারিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান ফিরে নতুন নাম্বার নিয়ে আমাকে ফোন করার কথা ছিল। কিন্তু তা করেনি।  সে যাই হোক ওকে আমার মনের কথা জানাতে হবে। আমাকে ও রিজেক্ট করে দিলেও তাতে আমার দুঃখ থাকবেনা।  কিন্তু কিভাবে ওকে বলবো।  হঠাৎ আমার মনে পড়লো ও পাকিস্তানের একটা ঠিকানা দিয়েছিল টিকিট কাটার সময়।

 ঠিকানাটা ছিলঃ Shareen Apartment, Block 3, 24 Lane, Gulshan-E-Igbal, Karachi.

 এইবার যেই ভাবনা সেই কাজ। টিকেট, ভিসা সব রেডি করে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

পাকিস্তান পৌঁছে ঠিকানা অনুযায়ী গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম ফারাহ বাসায় নেই, ওর ভার্সিটিতে গেছে।  আমি সেখান থেকে ওর ভার্সিটির সামনে গিয়ে বসে।  আছি কখন দেখতে পাব ওকে। অনেকক্ষণ পর সবার সাথে ফারাহ বের হয়েছে আমাকে দেখে ও স্তম্ভিত হয়ে গেল। 

ভার্সিটি ক্যাম্পাসের এক কোনে আমি আর ও বসে আছি। 

- তা হঠাৎ আপনি এখানে! ফারাহ বলল।

- কি করব বলো।  কেউ তো আর আমার খবর নেয় না দেশে ফিরে ঠিকই আমাকে ভুলে গেছে। 

- আসলে আমি আসার পথে আপনার দেয়া নাম্বার টা হারিয়ে ফেলেছি।  নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগছিল তাই আমি আমেরিকা গিয়েছিলাম আবার। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আপনি বাংলাদেশে গেছেন। ভেবেছিলাম আপনাকে হারিয়ে ফেললাম বুঝি।  তবে  আপনি এখানে আসবেন কখনো ভাবি নি।

- কি করব বল তোমার আসার পর থেকে প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে খুঁজে বেড়াই তুমি বলেছিলে ফারাহ আমার বউ খুব ভাগ্যবতী হবে। তুমি কি আমার সেই ভাগ্যবতী হবে। 'আই লাভ ইউ' ফারাহ।  আমি জানি তুমি আমাকে রিজেক্ট করে দেবে। তবে আমি আমার মনের কথাটা তোমাকে জানানোর জন্য  এখানে এসেছিলাম। 

 এটা বলে চলে আসছি। আর পেছন থেকে ডাক...

- নিজের কথাই বলবে আমারটা শুনবে না আমি কেন তাহলে আবার আমেরিকা গিয়েছিলাম শুনি?

- আমার টাকা ফেরত দিতে গিয়েছিলে নিশ্চয়ই।

 -কখনোই না হাঁদারাম আপনি যেটা আজ বললেন সেটা বলতে চেয়েছিলাম আমিও আপনাকে আমিও অনেক আগে থেকেই ভালবেসে ফেলেছি।  বলতে পারিনি  মনের কথা। 

- তাহলে ভাই আমার টাকাটা দিয়ে দাও। হাহাহা। 

- কিসের টাকা আবার ক'দিন পর তো তুমি আমার স্বামী হবে। 

- তাহলে তো তোমাকে প্রপোজ করে বড় ভুল হয়ে গেল। টাকা লস হয়ে গেল অনেকগুলো।

- কিপটে কোথাকার দেনমোহর হিসেবে তো এমনিতেও দিতে হতো তোমার। যাও মাফ করে দিলাম তোমার দেনমোহর।  আর হ্যাঁ এখন থেকে রান্নাটা তুমি করবে তখন তোমার বাসায় অতিথি হিসেবে ছিলাম বলে আমি করেছিলাম।

- তাহলে তো আমার সব দিক দিয়ে ক্ষতি। তাহলে থাক ভাই আমার বিয়ে করার দরকার নেই আমি যাই। 

-হাহাহাহা....


 পৃথিবীর সব ভালোবাসাই পূর্ণতা পাক পবিত্র  বিয়ের মাধ্যমে।....

Again I want to say,' There is  no  end for love.'

Author: 
Hridoy Ahmed Labib

  ©All rights reserved by storylandbd        

STORYLANDBD
STORYLANDBD

This is a short biography of the post author. Maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec vitae sapien ut libero venenatis faucibus nullam quis ante maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec.

No comments:

Post a Comment