রাত ১০টা। মেঘ ছাদে। রহিমা খালা এসেছে ওকে নিচে নিয়ে যেতে কিন্তু যায়নি সে। থমথমে পরিবেশ। মনে হচ্ছে সবকিছু যেন থমকে গেছে।
হঠাৎ করেই কোথা থেকে দমকা হাওয়া ছুটতে শুরু করলো। শো শো করে বাতাসের শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন এক অদৃশ্য তান্ডব শুরু করেছে।
নিচে নামার প্রস্তুতি নিয়ে মেঘ উঠে দাড়ালো। হঠাৎই অনুভব করলো কে যেন ফিস ফিস করে তার নাম ধরে ডাকছে।
-"মেঘ, এই মেঘ, শোনো।"
মেঘ যেমন চঞ্চল তেমনি সাহসী। একটুও ভয় না পেয়ে নির্ভয়ে পেছনে তাকালো। তারপর যা দেখলো তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলোনা। তার সমবয়সী একটি মেয়ে আকাশে ভাসছে এবং অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেঘ খানিকটা চমকে গেলো। "আশ্চর্য মেয়েটা ভাসছে কিভাবে?" মেঘ কৌতুহলবশত আরো সামনে এগিয়ে গেল। ভয় বলতে কোনো শব্দই বোধহয় মেয়েটার জানা নেই।(আমি নিজে থাকলেও মনে হয়না এতক্ষনে আমার জ্ঞান থাকতো।)
-তুমি কে? প্রশ্ন করলো মেঘ।
-আমি বৃষ্টি।
-তুমি এরকম ভাসছো কিভাবে? তুমি কি পরী?
-হ্যা আমি পরী। আমার খেলার কোনো সাথী নেই তাই আমি তোমার সাথে খেলতে এসেছি।
-ওহ আচ্ছা। কিন্তু তুমি যে এখানে এসেছো তোমার আম্মু তোমাকে বকবে না?
- না। আমরা যখন যা ইচ্ছে করতে পারি, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারি। কিন্তু আমার কোনো বন্ধু নেই। দেখলাম তুমি মন খারাপ করে বসে আছো, তোমারও কি আমার মতো বন্ধু নেই?
- (মন খারাপ করে) না স্কুলে বন্ধুরা আছে কিন্তু বাসায় সারাদিন একা থাকতে হয়। মামনি, পাপা অফিসে ব্যস্ত থাকে।
-ঠিকাছে আজ থেকে আমরা তাহলে বন্ধু।
এভাবেই গল্পে গল্পে বন্ধুত্ব হয়ে উঠলো মেঘ-বৃষ্টির। বৃষ্টি এখন প্রতিদিন রাতে মেঘের সাথে খেলতে আসে। অনেকদিন হয়ে গেছে তাদের বন্ধুত্বের। একদিন হঠাৎ বৃষ্টি মেঘ কে বললো যে সে মেঘকে পরীর রাজ্যে নিয়ে যেতে চায়। মেঘও অনেক আনন্দের সহিত যেতে রাজি হয়ে যায়।
বৃষ্টি মেঘকে নিজের রাজ্যে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেঘ আনন্দে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। মেঘ সবসময় ভাবতো সে যদি পরী হতে পারতো। আজ সে একদম বৃষ্টির মতো সেজেছে। নিজেকে পরী মনে হচ্ছ। বৃষ্টির মা মেঘের অনেক যত্ন-আত্তি করে। পুরো একদিন মেঘ সেখানে কাটায়। তারপর সে বলে সে বাসায় ফিরতে চায়। এবারেই বিপত্তি দেখা দেয়। পরীর রাজ্যের কেউই মেঘ কে আসতে দিতে চায়না। কারন এটা তাদের নিয়মের খেলাফ। এই রাজ্যে কেউ একবার প্রবেশ করলে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বৃষ্টি মেঘের হয়ে অনুরোধ করলো সবার কাছে। কিন্তু বৃষ্টির মাও নারাজ। তারা কিছুতেই মেঘকে পৃথিবীতে ফিরতে দিতে পারেনা। মেঘ এবার রুঢ় কন্ঠে বলে উঠলো, "তুমি সব জানার পরেও আমাকে ইচ্ছে করে নিয়ে এসেছো যাতে আমি আর বাসায় না যেতে পারি।"
-"বিশ্বাস করো আমি জানতাম না।"
বৃষ্টির মা রেগে গিয়ে, "তুমি পরীর দেশের রাজকন্যা হয়ে একজন মানুষকে কৈফিয়ত দিচ্ছো। কে আছো? এই মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যাও আর বন্দী করো ওকে।"
বৃষ্টি তার মাকে অনেক অনুরোধ করে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়না। এই নিয়ম বছরের পর পর বছর চলে আসছে। আর কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
মেঘ কারাগারে। বৃষ্টি তাকে ধোকা দিয়েছে। কিন্তু এখন সে বাসায় ফিরবে কি করে তা সে জানেনা। সারাজীবন হয়তো এখানেই বন্দী হয়ে কাটাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই কে জেনো তার কাধে হাত রাখলো।
বৃষ্টি। প্রচন্ড রাগে জিদে হাত ওর হাতটা সরিয়ে দিলো মেঘ।
-যে করেই হোক আমি তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাবো। কথা দিচ্ছি।
আশ্চর্য হয়ে তাকালো মেঘ।
-বিশ্বাস করো আমি সত্যিই জানতাম না। কিন্তু ভুল যেহেতু করেছি আমিই সুধরাবো। তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। আমি তোমার কিছু হতে দেবোনা। চল আমার সাথে।
-কোথায়?
-কথা বলোনা। চুপচাপ চলো।
এরপর অনেক কড়া পাহারা পার করে মেঘকে রাজ্যের মূল প্রান্তে নিয়ে যায় বৃষ্টি। আরেকজন দাররক্ষী দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি দ্বাররক্ষীকে উদ্দেশ্য করে,
-ওকে সাবধানে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবে।
-কিন্তু রাজকুমারী আপনি?
-আমি এদিকটা সামলে নেবো। তুমি ওকে নিয়ে যাও।
এবার মেঘকে উদ্দেশ্য করে,
-ভালো থেকো বন্ধু।
-আমাদের কি আর দেখা হবেনা?
-বোধহয় না। কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি যাও।কারা-রক্ষীরা হয়তো ইতিমধ্যে টের পেয়ে গেছে।
দ্বাররক্ষী মেঘ কে বাসায় পৌছে দিয়েছে।
-শোনো। আমি ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি জেনে ওরা এখন কি করবে?
-আমাদের রাজকুমারীর সারাজীবনের নির্বাসন হবে। তুমি অনেক ভাগ্যবতী যে আমাদের রাজকুমারী তোমার বন্ধু। তোমার জন্য সে নিজের পরোয়া করেনি। বন্ধুত্বের বিশ্বাস রাখতে গিয়ে নিজের জীবন ঝুকিতে ফেলেছে সে।
-কি বলছো এসব?
-আর রাজকুমারীর নির্দেশ অনুযায়ী এখন আমি তোমার এই স্মৃতিগুলো মুছে দিতে চাই।
মেঘকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্বাররক্ষী গায়েব হয়ে গেলো।
মেঘ ঘুম থেকে উঠেছে। মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে। ছাদে ঘুমিয়ে গেছে কিভাবে মনে পড়ছে না কিছু। সবকিছু আবছা মনে হচ্ছে। যাইহোক স্কুলের সময় হয়ে গেছে। যাই…
গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তবে অনেক খারাপের মধ্যেও কিছু ভালো থাকে। লোকদেখানো বন্ধু অনেক থাকলেও দিন শেষে কিছু মানুষ থাকে যারা নিজেদের পরোয়া না করে আপনার আমার জন্য লড়াই করে। অনেকক্ষেত্রে হয়তো তাদের অবদানগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারনাও থাকেনা।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মেয়েটা দেখতে হুবহু মেঘের মতো।
Author:
Farhana Akter Mim
Studies at Khulna University of Engineering & Technology
© Copyright 2020. All rights reserved by storylandbd.
No comments:
Post a Comment