valobasa ta obbase |
"উফফ তিন্নি টা এখনো আসছে না কেন? তিন্নি তো কখনো লেইট করেনা আজ কি হলো ওর? আধ ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছি।"
ক্যাম্পাস লাইফের ৪ বছরে এই প্রথম শিশির তিন্নির জন্য অপেক্ষা করছে। তিন্নি অনেক বেশি পাংচুয়াল হওয়ায় শিশিরের কখনও অপেক্ষা করতে হয়না বরং তিন্নিই সবসময় অপেক্ষা করে শিশিরের জন্য।
তিন্নি হচ্ছে শিশিরের বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রায় সাড়ে চার বছরের বন্ধুত্ব তিন্নি আর শিশিরের। যদিও তাদের পরিচয় একটি কাকতালীয় ঘটনা। ফেসবুকে একটি পোস্টের কমেন্টে তাদের প্রথম কথোপকথন। তারপর শিশির নিজেই তিন্নি কে ইনবক্সে মেসেজ দেয়। কথা বলার শুরুর দিকে তিন্নি কে হঠাৎ হঠাৎ খুব বিরক্ত লাগত শিশিরের। "মেয়েটা কেমন যেন, খুব অদ্ভুত, প্রথম পরিচয়ে কেউ কাউকে পাগল ছাগল বলে সম্বোধন করে নাকি, এরকম কেন মেয়েটা, মাথায় সমস্যা আছে নাকি?" এসবি ভাবতো শিশির।
তিন্নি আর শিশির বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে একদম এপিঠ-ওপিঠ। কারো সাথে কারো চিন্তাভাবনা, কথাবার্তায় কোন মিল নেই। এইজন্যেই তো সারাদিন তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি মারামারি লেগেই থাকে। শিশির অনেক ধৈর্যশীল,কথা কম বলে কিন্তু অনেক ভালো শ্রোতা তারই সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এই কারনেই তিন্নির সব সমস্যার সমাধান মানেই শিশির।
এদিকে তিন্নি ছোটবেলা থেকেই অনেক উড়নচণ্ডী স্বভাবের। নিজের মন মত যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ানো অভ্যাস নিয়েই বেড়ে ওঠা তিন্নির। প্রচন্ড স্বাধীনচেতা। ওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অনরগল কথা বলা আর সারাটাদিন খিলখিলিয়ে হাসা। একটা মেয়ে সারাটা দিন এত কিভাবে কথা বলতে পারে আর এত হাসতেই বা কিভাবে পারে? এই প্রশ্নের জন্য সবার কাছে অনেক রহস্যময়ী তিন্নি। তিন্নি বিশ্বাস করে জীবন থেকে যেই সময়টুকু চলে যায় সেটা আর কখনো ফেরত পাওয়া সম্ভব না তাই জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত আনন্দ সহকারে উপভোগ করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে আফসোস করতে না হয়। জীবনকে উপভোগ করার এক বিন্দু সময়ও তিন্নি নষ্ট করতে চায়না তাই শত মন খারাপের মাঝেও সব সময় হাসতে থাকে তিন্নি।
এমনকি এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই সবার কাছে অনেক প্রিয় তিন্নি। তিন্নি সম্পর্কে বলতে গেলে বলা শেষ হবে না, অত্যাধিক সাহসের অধিকারী এই মেয়েটি অন্যায়ের সময় যেমন কঠোর তেমনি মানুষের প্রতি অত্যন্ত সদয় ও মমতাময়ী। মুহূর্তের মধ্যেই যেকোনো অপরিচিত মানুষকে আপন করে নেয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে মেয়েটার।
তিন্নির এই বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করতে পারেনি শিশিরও। পরিচয়ের কিছু মুহূর্তের মধ্যেই যেন অদ্ভুত এক মায়ায় জড়িয়ে গেছে সে। প্রথম প্রথম তিন্নি কে তার বিরক্ত লাগলেও আস্তে আস্তে বিরক্তিটা ভালোলাগায় পরিণত হতে থাকে। আর ভালোলাগাটা অভ্যাসে।
এক সকালে হঠাৎ একটি ফোন এলো শিশিরের ফোনে
" অপরিচিত নাম্বার"।গভীর ঘুমে মগ্ন সে,অনিচ্ছা সত্বেও ফোন টি রিসিভ করলো। ফোনটা রিসিভ করতেই অদ্ভুত সুন্দর কন্ঠে একটি মেয়ে চিৎকার করে বললো, " কিরে কই মরছিস তুই, কতগুলো মেসেজ দিছি তোকে, রাতে ফোন দিলাম ফোনও বন্ধ, সমস্যা কি তোর, মরবি ভালো কথা বলে কয়ে মরবি তো"। "সাত সকালে অপরিচিত একটি মেয়ে ফোন দিয়ে এত কথা শোনাচ্ছে কেন আর আমিই শুনছি বা কেন?" এসব ভাবতে ভাবতে অস্ফুট কন্ঠে শিশির বলল, " হ্যাঁ কবর থেকে বলছি কিন্তু কে আপনি?"
এবার অগ্নি মূর্ত হয়ে মেয়েটি উত্তর দিল,"তোর যম"।
ফোন দেয়া মাত্রই এরকম উদ্ভট ভাবে একটি মেয়েই কথা বলতে পারে তাই শিশিরের বুঝতে আর একটুও বাকি থাকল না যে সেটা আর কেউ নয় তিন্নি।
অনেক অবাক হয়ে শিশির জিজ্ঞেস করল," তুই আমার নাম্বার পেলি কোথা থেকে?"
-"তীর্থ কে মেসেজ দিছিলাম ওর কাছ থেকে নাম্বার নিছি।"
-"তীর্থ কে আবার তুই কোথায় পেলি?"
-"কেন সেদিন না বললাম তোর ফ্রেন্ড আমাকে রিকোয়েস্ট দিছে।"
-"তা ঠিক আছে কিন্তু তুই না বললি তুই ওর রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবি না।"
-"হ্যাঁ করি নাই তো"
-" তাহলে?"
-"তাহলে আর কি, এমনি মেসেজ দিছি, দিয়ে বলছি তোর নাম্বার দিতে।"
- "ও সাথে সাথে তোকে নাম্বার দিয়ে দিল?"
- "না সাথে সাথে দেয় নাই, একটু নাটক করছে ।তারপর আমারও একটু এক্টিং করতে হয়েছে তারপর দিছে।"
- "কি বলছিস তুই ওকে?"
-"বেশি কিছু না, বলছি যে, তোর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে, তাই তুই রাগ করে আছিস, তোকে কনভিন্স করতে হবে, অনেক সিরিয়াস ইস্যু এইসব হাবিজাবি আর কি।
-"আজব তো, তোর সাথে আমার ঝগড়া হইল কবে যে আমি রাগ করবো"
-"তাইলে তুই এরকম না বলে আইডি অফ করে ভাগছিস কেন? কাল থেকে তোর কোনো খবর নাই, কত টেনশন এ ছিলাম আমি জানিস?"
"সবসময় বকতে থাকা মেয়েটা আজ এরকম মায়া জড়ানো কন্ঠে কথা বলছে কেন? আর আমি ওকে বলেই বা গায়েব হবো কেন? আর ওই বা এতো ঝামেলা করে আমার নাম্বার টা জোগাড় করলো কেন? আমি ওর সাথে কথা না বল্লেই বা ওর কি? আমি কি আসলেই ওর কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ? "
- এগুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি এসে জমা হলো শিশিরের।
আর কখনো এরকম না বলে যাবেনা, এই শর্তে সে যাত্রায় তিন্নির রাগ থেকে মুক্তি পেল শিশির।
দিনে দিনে রাগ, অভিমান, ভালোলাগা, কেয়ার, দায়িত্ববোধ এসব মিলিয়েই বন্ধুত্ব টা দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হতে থাকলো। নিজেদের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না যেন একদম ভাগ করে নিয়েছে তারা দুজনে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে তিন্নির একটাই শর্ত ছিল। নিজেদের বন্ধুত্বটা যেন বন্ধুত্ব পর্যন্তই থাকে অন্যকিছুতে যেন না যায়। কারণ শিশির কে বন্ধু হিসেবে হারাতে চায়না সে কখনওই।
কিছুদিন পর এলো ইউনিভার্সিটি ভর্তির সময়। শিশিরের বুয়েটে চান্স হয়েছে, তিন্নি চান্স পায়নি। তিন্নি শিশিরকে ফোন দিয়ে শুভকামনা জানালো সে শিশিরের জন্য অনেক খুশি। কিন্তু শিশিরের মন খারাপ কারন সে ভেবেছিলো দুজন একি ভার্সিটিতে পড়বে। তিন্নি শিশিরকে আশ্বাস দিলো, "যেখানেই থাকিনা কেন আমাদের বন্ধুত্ব আজীবন এরকমই থাকবে"। অতঃপর ভার্সিটিতে ভর্তির দিন আসলো। তিন্নি কুয়েট এ ভর্তির জন্য এসেছে। ভর্তির সব প্রসিডিউর শেষে তিন্নি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে। ফোন বাজছে, শিশিরের কল। রিভিস করতেই, " কই তুই তিন্নি?"
-"ক্যাম্পাস ঘুরতেছি, (শিশির কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই) জানিস আমার ক্যাম্পাসটা কত্ত জোস, তুইতো ভর্তি হইছিস এক মুরগী খোপে না আছে একটা সুন্দর গেইট, না ক্যাম্পাসের কোনো সৌন্দর্য। আমার ভার্সিটিতে এসে একটা ট্যুর দিয়ে যাইস। আর ফিরে যেতেই ইচ্ছে করবেনা।"
-আমার ক্যাম্পাস সবচেয়ে জোস। সো এত চাপা ঝাড়িস না।
তিন্নি অগ্নিমূর্ত হয়ে,
-আগে আমার ক্যাম্পাসে আয় তারপর এসব হাবিজাবি বলিস।
-তাহলে আমি কোথায় আছি?
-তুই কই আমি কেমনে বলবো।
-পিছনে তাকা।
পিছনে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো তিন্নি। এটা শিশির কিন্তু ও এখানে কি করছে সেই হিসাব মেলাতে পারছেনা তিন্নি। এই প্রথম তারা দুজন দুজনকে দেখছে কিন্তু নিজেদের চিনতে একটুও সময় লাগেনি তাদের।
শিশির এগিয়ে এসে তিন্নির মাথায় আস্তে করে একটি টোকা দিয়ে বললো, "কি বলছিলাম না আমার ক্যাম্পাস বেশি জোস।" সবসময় কথা বলতে থাকা মেয়েটা এখনো স্তব্ধ, এগুলো কি হচ্ছে সেটা বুঝতে না পেরে। কিছুক্ষন পর গিয়ে তিন্নি বুঝতে পারলো শিশিরও এই ক্যাম্পাসেই ভর্তি হয়েছে। কিন্তু কেন? ওর তো সারাজীবনের স্বপ্ন বুয়েটে পড়া তাহলে ও এখানে কেন? তিন্নির ঘোর কাটতে কাটতে আর বুঝতে বাকি থাকলোনা যে ওর জন্যেই শিশির এখানে। কিন্তু শিশিরের বাহানা তৈরী, "আরে বুয়েটে সাবজেক্ট পছন্দ হয়নি তাই চলে আসছি"।
এভাবেই ফেইসবুক ফ্রেন্ড থেকে বাস্তবজীবনে বন্ধুত্বের পথচলা শুরু দুজনের। দেখতে দেখতে আজ ক্যাম্পাস লাইফের ৪টা বছর শেষ। আজও বন্ধুত্বটা ঠিক তেমনি আছে।
"কিন্তু চোখের আড়াল হলেই যে মনের আড়াল হয়ে যায় এই বাক্যকে সত্যি প্রমান করে যদি সত্যি সত্যিই তিন্নি দূরে চলে যায়, সাড়ে চার বছরের অভ্যাস, এত সহজে ছাড়বোই বা কিভাবে"- এসব ভাবতে ভাবতেই আরো ২০মিনিট পার হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছে শিশির। তিন্নির এখনো কোনো খবর নেই। ফোনটাও ধরছে না। কোনো বিপদ হলোনা তো। হঠাৎই দূর থেকে একটা মেয়েকে হেটে আসতে দেখছে শিশির। চেনা পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু কে? নীল শাড়ি, খোলা চুল, নীল টিপ, হাত ভর্তি কাচের চুড়ি নিয়ে অপরুপ সুন্দরী ললনা এগিয়ে আসছে। মেয়েটি শিশিরের দিকেই আসছে। "আরে এ যে তিন্নি"-তিন্নি কে এই বেশে দেখে শিশিরের চোখ চড়কগাছে। এই প্রথম শিশির তিন্নিকে এইভাবে দেখছে, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তিন্নি কে আজ। "কিন্তু আজ এইভাবে আসলো কেন ও?"- শিশির মনে মনে ভাবছে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলছে না।
" ওহো এগুলা কেউ পড়ে নাকি, ঝামেলা একটা, কিভাবে যে সামলায় মানুষজন" - বিরক্ত কন্ঠে তিন্নি।
-তো তোকে পড়তে বলছে কে, এমনিও তো শেওড়া গাছের পেত্নীর মতো লাগতেছে।
-তোর ভালো লাগতে হবেনা যার জন্য শাড়ি পরেছি তার ভালো লাগলেই হবে।
শিশির একটু থমকে গেল," আজবতো আজ তিন্নি একটুও রাগলো না। অন্যদিন তো একটু সেজে আসলেই জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে বলতো কিন্তু আজ কি হলো ওর আর কার জন্যেই বা এতো সাজ।"
-তুই সুস্থ আছিস তো তিন্নি, জ্বর নেই তো, হইছে কি তোর তিন্নি, আর এই ফুলই বা কার জন্য?
-আসলে দোস্ত তোকে বলা হয়নি, কিভাবে বলবো বুঝতেছিলাম না তাই ভাবলাম একবারে সামনাসামনি তোকে সারপ্রাইজ দেই।
- সারপ্রাইজ! কিসের সারপ্রাইজ? আর কি বলিস নাই তুই আমাকে? উফফ বলবি তো ক্লিয়ারলি হইছে টা কি? -আজ যেন শিশির একদম তিন্নির মতো হয়ে গেছে, অনরগল প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
তিন্নি একটু আমতা আমতা করতে করতে,
-আসলে আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি,আমাদেরই ব্যাচমেট, আর আজ যেহেতু ভার্সিটির শেষদিন তাই আমি ওকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোকে ছাড়া তো কখনো কিছু করিনাই তাই তোকেও আসতে বলছি। আফটার অল আমার জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত সেটা তোকে ছাড়া সম্পূর্ন হবে কিভাবে।
-মানে কি এসবের? কি বলতেছিস নিজে জানিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর? খাইছিস কিছু? আর কবে হইলো এই ভালোবাসা-বাসি? আমারে তো আগে বলস নাই। আর সবকিছু তো ঠিকঠাকই এ ছিলো তাইলে এসব হইলো কবে? আর এই নমুনা টা কে শুনি?- মুহূর্তেই যেন শিশিরের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়েছে, কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।
-আরে বাবা সব বলছি আগে একটু শান্ত হ তুই। ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে কখন যে ওর প্রতি ভালোলাগাটা তৈরি হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি আর ভার্সিটি লাইফটা শেষ, আজ না বললে হয়তো আর বলার সময় হবে না, তাই হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত টা নেয়া আর আমিও বুঝতে পারছিলাম না আসলে হচ্ছে কি, তাই তোকেও আর বলার সময় সুযোগ পাইনি। ভাবলাম আজ তোদের দুজনকে একসাথে সারপ্রাইজ দেই।
শিশির এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা ওর আসলে কি বলা উচিত। হঠাৎই শিশির আবিষ্কার করল যে ওর চোখের কোনে পানি টলমল করছে।
"একি আমি কাঁদছি? কিন্তু কেন? আনন্দে নাকি তিন্নিকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে? একমুহূর্তেই তিন্নিকে আজ এত অচেনা লাগছে কেন? বন্ধুত্ব টা কি এখানেই শেষ? তিন্নির কি আর এখন আমাকে দরকার হবেনা। হবেই বা কেন এখন ওর ভালবাসার মানুষ আছে তো।
আমিও বা এতো ভাবছি কেন?" হাজারো প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে শিশিরের মস্তিষ্কে। "তাহলে কি আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি? আরে না না ধুর তা হবে কেন, ও শুধু আমার অভ্যাস, সময়ের সাথে সাথে অভ্যাস টা কেটে যাব।"- এভাবেই নতুন নতুন সমীকরণ অংক কষছে শিশিরের কাছে। এর আগেও যে কতবার শিশিরের মনে এরকম প্রশ্ন এসেছে তার হিসাব নেই। কিন্তু তিন্নির দেয়া বন্ধুত্বের শর্ত মানতে গিয়ে নিজের এই চিন্তা গুলিকে বরাবরই দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে সে। কারণ কোনভাবেই যে সে তিন্নি কে হারাতে চায় না।
কিন্তু আজ যে নিজের চোখের সামনে তিন্নিকে অন্যের হতে দেখবে শিশির, তা কিভাবে সহ্য করবে সে, তাই নিজের চোখের পানিকে আড়াল করে হাসিমুখ নিয়ে বললো,
-" এক বালতি সমবেদনা তার জন্য। আসলে চোখের সামনে আরেকজনের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া সহ্য করতে পারব না আমি, তাই তোর বয়ফ্রেন্ড তুই দেখ আমি গেলাম।"- কথাটা বলেই শিশির উল্টো ঘুরে হাটতে শুরু করলো। তিন্নি যতই ডাকুক না কেন আর পেছনে ঘুরে তাকাবেনা সে।
-"এই ছেলে শোনো"-তিন্নির ডাক। কথাটা শুনতেই শিশির বুঝে গেছে সেই ছেলেটা চলে এসেছে। অনিচ্ছাসত্তেও উল্টো ঘুরে এক পলক তাকাতেই দেখে এ যে তীর্থ। চিন্তাশক্তি একদমই হারিয়ে ফেলেছে শিশির। ওর ছোটবেলার বন্ধু তীর্থ। আর ও সবটা জানতো যে শিশির তিন্নি কে নিয়ে কি ভাবে, তাহলে ও এরকম কিভাবে করলো, একবার অন্তত বলতে তো পারতো। যাইহোক এবারই হয়তো তিন্নি প্রপোজটাও করে ফেলবে। অবশ্য তিন্নি কে যে পাবে সে অনেক ভাগ্যবান হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবার আর কান্নাটা নিজের কাছে লুকাতে পারলোনা শিশির। তাড়াতাড়ি হাটছে সে, যেন তার অশ্রুসিক্ত চোখে কারো চোখ না পড়ে যায়।
এবার আরো একবার তিন্নির ডাক, "আরে দাড়াও না, এতো তাড়া কিসের"।
" আশ্চর্য! তিন্নি আমাকে ডাকছে না তো?"- কোনোমতে চোখটা মুছেই পিছনে তাকাতেই যা দেখলো তা কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি শিশির।
ফুল হাতে হাটু গেড়ে শিশিরের সামনে বসে রয়েছে তিন্নি- -"এই বেয়াদব কোথায় যাচ্ছিস"।
-(চোখ মুছতে মুছতে)ইয়ে মানে বাসায়।
-দেখ আমি কথা পেচাইতে একদমই পছন্দ করিনা তাই সোজা সাপ্টা বলছি, আমাকে তোর সারাজীবনের অভ্যাস বানাবি?"
-এটাকে তো বলা বলেনা না, জিজ্ঞেস করা বলে।
-কেন রিজেক্ট করার ধান্দায় আছিস নাকি?
-না বাট ভেরিফিকেশন এর জন্য একটু টাইম দরকার।
-থাপরাইয়া দাত গুলা সব ফালায় দিবো, তুই ফুলটা নিবি না আমি তীর্থ কে দিয়ে দিবো।
তীর্থ-আমাকে দে ভাই, "এরকম রোমান্টিক প্রপোজাল পাইলে জীবনে আর কি দরকার"।
খপ করে ফুলটা নিয়ে নিলো শিশির- "একটা জিনিস এখনো বুঝলাম না তীর্থ এখানে কি করে?"
-"তোকে যে আমি এত এফোর্ট দিয়ে প্রপোজ করলাম তার প্রমান রাখতে হবেনা, ভবিষ্যতে নাতি নাতনি কে কি দেখাবো, তোর মাথা? আর তুই কি পরিমান হাদারাম এটাও তো সবাইকে বুঝাইতে হবে নাকি যে শেষমেষ প্রপোজ টাও আমার করা লাগছে। চারটা বছর সময় পাইলি অথচ কিছু বলতেই পারলিনা খালি পারিস মেয়েদের মত কান্নাকাটি করতে।
-না মানে…
-চুপ। একদম চুপ। এখন আসছে মানে বের করতে। চল। আইসক্রিম খাব। আজকে সব বিল তুই দিবি।
-আচ্ছা চল। যত ইচ্ছা খা, খেয়ে খেয়ে হাতির সমান ওজন বাড়া।
-হ্যা খাবোই তো, তোকে ফকির করার জন্য হলেও খাবো।
-সম্মান দিয়ে কথা বল, আমাকে আপনি করে বলবি এখন থেকে।
-হ, স্বপ্নে। ওই আশাতেই থাক তুই।
এভাবেই শুরু হলো আরেকটু দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক…...
গল্পের শেষ এখানে হলেও শিশির আর তিন্নির জীবনের চলার পথ এখান থেকেই শুরু।
বন্ধুত্বের শেষ ভালোবাসায় আর ভালবাসাটা অভ্যাসে………...
Writer- Farhana Akter Mim
All rights reserved by storylandbd
No comments:
Post a Comment