পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি শব্দ। এটাতো আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবাই কি সেটা মন থেকে মানি?
অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো কথাগুলো লিখব। কিন্তু যান্ত্রিক জীবন যাত্রায় এতই ব্যস্ত যে লেখার সময়টাও হয়ে ওঠেনি।
তো যেটা বলছিলাম….
আজকাল যাকেই দেখি সবার কাছেই তার প্রথম প্রায়োরিটি তার ফ্যামিলি। কিন্তু সেই ফ্যামিলির মধ্যে কি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মায়ের নামটা থাকে?
যদি থেকেই থাকে তাহলে তারা কারা যাদের সন্তানেরা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার অথবা কেউ কর্পোরেট অফিসার কিন্তু এসব গর্বিত মায়েরাই রাস্তায় ভিক্ষা করে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে জীবনের শেষ সময়টুকু অতিবাহিত করে। জীবনের যে শেষ সময়টুকুতে নাতি-নাতনিদের সাথে খেলা করে জীবনের অমূল্য সুখ টুকু উপভোগ করার কথা সে সময় তারা দুবেলা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারস্থ হয়। খুব জানতে ইচ্ছে হয়, তাদের সাথেও যে ভবিষ্যতে এমন হতে পারে সেটা কি তারা জানে? হয়তো জানে না, জানলে মনে হয়না এরকম দুঃসাহস করার সাহস তাদের হত।
একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে একজন বয়স্ক মহিলা এসে কিছু খেতে চাইল বলল সারাদিন ধরে কিছু খায়নি। কিন্তু মহিলাকে দেখে ভিক্ষুক মনে হচ্ছিল না। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি থাকেন কোথায়?" একথা বলতেই সে হো হো করে কেঁদে উঠলো ঠিক একদম ছোট বাচ্চাদের মতন। কাঁদতে কাঁদতে নিজেই বলতে শুরু করল "বাবা আমার থাকার কোন জায়গা নেই। আমার ছেলেরা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে"। রাগান্বিত হয়ে বললাম,"আপনি পুলিশের কাছে কেন জাননি বাসাটা তো আপনার নিজের তাইনা"। এরপর সে চোখ মুছতে মুছতে বলল, "যেমনই হোক না কেন বাবা তারা তো আমার সন্তান। এখন একটু রেগে আছে রাগ ভেঙ্গে গেলে ঠিক আমাকে নিতে আসবে"।
কথাগুলো শুনতেই নিজের অজান্তে চোখের কোনে পানি এসে জমলো হঠাৎ করেই আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছিল। সাথে ভেসে উঠছিল আম্মুর অশ্রুসিক্ত মুখখানা। মনের ভেতর বিভিন্ন রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল আচ্ছা আমিও তো মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর আমার কথায় কষ্ট পেয়ে আম্মু কতবার কেঁদেছেও। আমিও কি ওনার সন্তানদের মত মানুষরুপি পশু হয়ে যাচ্ছি?আমিও কি কখনও এমনটা করবো? আম্মুর ও কি কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পড়ার সম্ভাবনা আছে?
ভদ্রমহিলার হাতে কিছু টাকা দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটতে শুরু করলাম।
সব আম্মুরাই মনে হয় এরকম। একটা মানুষ যতই খারাপ হোক না কেনো একজন মা সবসময়ই মমতাময়ী ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ।
আমরা যতই দুর্ব্যবহার করিনা কেন প্রয়োজনে মা সবসময় পাশে থাকে। যখন বাবাদের কাছে কিছু চেয়ে না পাই তখন আম্মুই তার নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাদের সেই ইচ্ছা পূরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। আমাদের কাছে সেগুলো অনেক তুচ্ছ মনে হলেও যেদিন আমরা নিজে মা-বাবা হব সেদিন হয়তো এগুলোর মর্ম বুঝবো। ক্ষুধা লাগলে খাইয়ে দেয়া, অসুস্থ হলে সারারাত মাথার কাছে বসে থাকা, বাসা থেকে বের হলে সবসময় ফোন দিয়ে খোজখবর নেয়া, একটুতেই চিন্তা করা, এই ভালোবাসা গুলো শুধুমাত্র আম্মুদের দারাই সম্ভব। আম্মুরা হলো santa clause এর মতন, শুধু wish করলেই হয়। তারা নিজের ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও ইচ্ছাগুলো পূরন করে। আমরা অনেক ভাগ্যবান যাদের মা-বাবা আছে। অনেকের তো এই ভাগ্যটাও হয়না।
কিন্তু এতোকিছুর পরেও আমরা আমাদের মায়েদের কাছে সম্পুর্ণ কৃতজ্ঞ হতে পারে কি?????
আমরা অনেক ভাগ্যবান যাদের মা-বাবা আছে bt সেটা বুঝতে পারিনা; যখন তারা চলে যায় তখন ঠিকই বুঝি কিন্তু তখন আর কান্না করা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
ReplyDelete