Author: Salma Haque
অনিমা ক্যান্টিনে বসে একা একা চা খাচ্ছে। বরাবরের মতো একদম দূরে কর্ণারের টেবিলটায় বসেছে। আমি ঢুকতেই চোখাচোখি হলো এবং সবসময়ের মত চোখ নামিয়ে নিল। আমার ভীষণ রাগ লাগতো আগে, এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম মনে হতো মেয়েটা খুব অহংকারী। ক্লাসে তেমন কারো সাথেই মেশে না। নিজে আগ বাড়িয়ে তো জীবনেও কিছু বলবে না, উল্টো কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যাঁ হু করে কাজ সেরে নেয়। দীর্ঘ দেড় বছর একসাথে ক্লাস করার পর বুঝতে পেরেছি মেয়েটা আসলে ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী।
আমরা প্রায়ই মনে করি অন্তর্মুখী মানুষ মানেই সে লাজুক নয়ত অসামাজিক। কিন্তু তা সবসময় সত্য না-ও হতে পারে। এমনওতো হতে পারে তারা কেবল সেইসব মানুষের সাথে সময় কাটাতে বা কথা বলতে পছন্দ করে যাদের সাথে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে! সত্যি বলতে ব্যক্তিত্বের ধরণ সবসময় বলে দেয় না যে একজন মানুষ কেমন বন্ধু হবে।
এই ধরনের মানুষদের খুব মজার একটা ব্যপার আছে। এরা নিজেরাই নিজেদের প্রেরণা দিতে পারে মানে যাকে বলে সেল্ফ মোটিভেটেড।
আামাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা আড্ডা দেওয়া বা খোশগল্প করা এড়িয়ে চলেন। অথচ কোন গম্ভীর আলোচনা হলে এরাই হয়ে উঠেন প্রচন্ড মনযোগী শ্রোতা এবং পরামর্শদাতা। তাই কোন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রয়োজন হলে একজন অন্তর্মুখী মানুষের কোন জুড়ি নেই।
সত্যি বলতে, অধিকাংশ মানুষ কখনো অন্তর্মুখী আবার কখনো বহির্মুখী। তাই, আমাদের বোঝা দরকার পাশের মানুষটা যার সাথে আমি ক্লাস করছি,কাজ করছি সে আসলে কেমন।প্রথমেই যদি একটা মতামত তৈরি করে ফেলি তাহলে সম্পর্কটা অনেক জটিল হয়ে যাবে।
ওহ্, সবশেষে একটা সুসংবাদ দিয়ে যাই।কিছুক্ষণ আগে অনিমার একটা খুদে বার্তা পেয়েছি। সে আমার সাথে একটা প্রোজেক্টে কাজ করতে চায়। সেই ব্যপারে আলাপ করার জন্য আজ সন্ধ্যায় আমার বাসায় আসবে।আমারতো আক্কেল গুড়ুম টাইপ অবস্থা। তাই দেখে রাতুল ছুটে এসে জানতে চাইলো ঘটনা কি? সবকিছু শোনার পর সে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে বললো, এতো বিস্মিত হবার কি আছে! মানুষের ব্যক্তিত্বতো আর কোন সফটওয়্যার না যে তা বদলানো যাবে না। বরং মানুষ চেষ্টা করলে তার ব্যক্তিত্ব বদল করতে পারে। ভেবে দেখলাম, আঁতেল রাতুল যেমনি হোক কথাটা কিন্তু ঠিকই বলেছে!
No comments:
Post a Comment