STRANGE EXPERIENCE-03

Photo by rawpixel.com from Pexels

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, স্কুল বন্ধ। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কোথাও বেড়াতে যাব। শেষ পর্যন্ত গেলাম পার্বনদের গ্রামের বাড়িতে। আমরা চারজন - পার্বন, প্রদীপ, আমি আর আবির। পার্বন আর প্রদীপকে আমি আমার নিজের ভাইয়ের মত মনে করি। আর আবির আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। যাই হোক পার্বনদের বাড়িটা খুব পুরনো। একজন কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ থাকে না। তাই সঙ্গত কারনেই ভূতের কথা আসবে। আমাদের মধ্যে আবির একটু নরম ধরনের। তাই ভূতের নিয়ে আলোচনা ও একটু নার্ভাস থাকে। আর আমার কথা হল ভূতকে আমি বিশ্বাস করি না আবার অবিশ্বাস ও করি না। কারন আমি কখনো ভূত দেখি নি। আবির ভয়ের কারনে অনেক সময় পার্বন-প্রদীপ একটু মজা করে। এমনকি আমিও। একদিন এমনই মজা করায় আবির রেগে যায়। ও আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। ও বলল, এখান থেকে একটু দূরে বেশ পুরানো একটা কবর- খানা আছে। ও দিনের বেলা গিয়ে সেখানে একটা লাঠিতে ওর নাম লিখে রেখে আসবে। আর অনেক রাতে একা গিয়ে আমাকে সেই লাঠিটা নিয়ে আসতে হবে। আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। পার্বন-প্রদীপ আমাকে বারবার নিষেধ করল। এরকম ছেলে মানুষি করতে। কিন্তু আবির চালেঞ্জ করে বসায় তখন  আমার মাথা গরম। বিকেলে গিয়ে আবির লাঠি রেখে আসল। তারপর প্রায় রাত ১১ টার পরে যাব লাঠি  আনতে।  গোরস্থানে যাওয়ার পথে প্রথমে নদীর পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা। তারপর একটা ছোট ভাঙ্গাচোড়া ব্রিজ। তারপর ডানদিকে খানিকটা গিয়ে সেই গোরস্থান। ওরা তিনজন রাস্তাটার শুরুতে অপেক্ষা করবে। পার্বন শেষবারের মত আমাকে মানা করল। কিন্তু আমি বেপরোয়া। নদীর পাশের পথ ধরে হাটতে লাগলাম। হালকা বাতাস বইছে। আসলে প্রচন্ড রাগের কারনে পথে কোনোরকম একঘেয়েমী বা বিরক্তী কোনটাই লাগত না। জোৎস্না রাত। তাই হাটতে কোনো অসুবিধা হল না। গোরস্থান চলে এলাম। হঠাৎ দেখলাম কেউ দাড়িয়ে আছে। আরেকটু কাছে গিয়ে দেখি সাদা জামা পড়া একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার চেয়ে মনে হয় ২-৩ বছরের বড় হবে। বোধ হয় কারো কবর জিয়ারত করতে এসেছে। আমার কি? আমি লাঠিটা খুজতে লাগলাম। আসলে আমার জেদটা এত চেপে গেছিল যে, আমার মনে হল না জায়গাটা পরিত্যক্ত। আর এই বয়সী একটা মেয়ের নিশ্চয়ই রাত ১২ টার সময় এখানে আসার কথা না। লাঠিটা খুজে পেয়ে আমি ফিরে চললাম। মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছিলাম ফিরে গিয়ে আবিরকে কি কি কথা শোনাবো। কিছুক্ষন পর মনে হল কেউ আমার পিছু পিছু আসছে। ফিরে দেখি বেশ দূরে সাদা কাপড় মড়ি দিয়ে কেউ দাড়িয়ে আছে। আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। ব্যাটা আবিরই নিশ্চই ওভাবে দাড়িয়ে আছে। আমি ঠিক করলাম পিছনে না তাকিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরে যাব। তাতে একা থেকে ও উল্টো ভয় পাবে। ব্রিজে ওঠার সাথে সাথে হঠাৎ ব্রিজটা ভীষণ রকম দুলে উঠলো। আমি রেলিঙ ধরে কোন রকমে সামলে নিলাম। তারপর ফিরে এসে দেখি ওরা তিনজন সেখানেই দাড়িয়ে আছে। তাই দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। যাই হোক লাঠিটা এগিয়ে দিলাম আবিরের দিকে। কিন্তু ও আমাকে দেখে হঠাৎ চিৎকার করে উঠে অজ্ঞান হয়ে গেল। আমরা ভীষণ অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচায়ী করলাম। তারপর ওকে বাসায় নিয়ে এসে পানির ঝাপটা দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হল। পার্বনের কথা মত আমি ওই  ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি তখনো বেশ অবাক। শুনতে পেলাম জ্ঞান ফিরে আবির আবারো আতঙ্কিতভাবে চিৎকার করছে। এরপর ওকে খাবার খায়িয়ে ঘুম পাড়ানো হল। ও ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি ঘরে ঢুকলাম। জামাকাপড় পাল্টাতে গিয়ে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমার শার্টের পিঠের দিকটা ছেড়া। যেন কোন বন্য পশুর থাবা দ্বারা ফালাফালা করে ফেলা হয়েছে। যাই হোক খেয়েদেয়ে আমি শুয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি আবির আমার দিকে চেয়ে ভয় কাঁপছে। তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালালাম। ওর দিকে আমি তাকাতেই ও চিৎকার করে উঠল। তাই পার্বন-প্রদীপও জেগে গেল। ওরা ওকে সামলাতে গেল। অপ্রকিতস্থের মত চিৎকার করতে করতে আবির আবার জ্ঞান হারালো। এমন সময় আয়নায় চোখ পড়ায় আমি চমকে উঠলাম। আমার পিছনে সেই গোরস্থানে দেখা মেয়েটি দাড়িয়ে রয়েছে। সাদা পোশাক পরা কিন্তু চোখ দুটো টকটকে লাল। আমি তাড়াতাড়ি পিছনে ঘুরলাম। কিন্তু সেখানে কেউ নেই। কেবল আয়নাতেই দেখা যাচ্ছে। এবার আমি বুঝলাম আবির কেন ভয় পাচ্ছে। পার্বন-প্রদীপকে ডেকে দেখলাম কিন্তু অবাক হলাম। কারন ওরা বলল ওরা কিছু দেখতে পাচ্ছে না। বাকি রাতটুকু দুশ্চিন্তায় আমরা তিনজনের কেউই ঘুমাতে পারলাম না।  এদিকে প্রচন্ড জ্বরে আবির শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
 
পরদিন ভোর হতে না হতেই মসজিদের ইমামের কাছে গেলাম। সব শুনে উনি ভীষণ কড়া গলায় আমাকে বললেন,"তোমরা শহরের ছেলেরা কোনো কিছুতেই গুরুত্ব দাওনা।  এখন তোমার বন্ধু যদি মারা যায়। তাহলে তার জন্য তুমিই দায়ী  থাকবে।" ভীষণ রকম রাগ হল আবিরের উপর। ওই তো আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বসল। যাই হোক উনি একটা উপায় বললেন। তারপর দুটো তাবিজ দিলেন। একটা আবির গলায় আর অন্যটা আমার ডান হাতের বাহুতে শক্ত করে বেধে দিলেন। তারপর বললেন আজকে রাত্রে আবার আমাকে সেই গোরস্থানে যেতে হবে। কিন্তু খালি গায়ে এবং গতকালের ছেড়া শার্টটা সেখানে নিয়ে পুরিয়ে ফেলতে হবে।  এবং তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে চল্লিশ পা দূরে সরে যেতে হবে।
 
রাত প্রায় সাড়ে এগারটা বাজে। আমাদের সাথে ইমাম সাহেবসহ গ্রামের আরো অনেক লোক এসেছে। তবে সবাই ব্রিজের উপর থেকে না নামে। আমি আমার গায়ের শার্ট খুলে ফেললাম।  পার্বন আমার কালকের শার্টটায় কেরোসিন মাখিয়ে দিল। হুজুর আমাকে একটা বেতের লাঠি দিলেন তাতে আরবীতে  অনেক কিছু লেখা। আমি লাঠির মাথায় শার্টটা শক্ত করে বেধে একটা মশাল বানিয়ে নিলাম। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে গোরস্থানের দিকে হাটা শুরু করলাম। কিন্তু আজ আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। ব্রিজ থেকে নামতেই ভীষণ শীত করতে লাগল। মনে হল যেন অন্য দুনিয়ায় চলে এসেছি। আরো খানিকটা যেতেই, চারদিকে শুনতে পেলাম অসংখ্য অশরীরির চিৎকার। চারদিকের পরিবেশ যেন আমাকে গলা টিপে মারতে চাইছে। সেই মেয়েটিকে দেখা গেল। কালকের মতই সাদা কাপড় পরা। চোখ টকটকে লাল। সেই চোখে নগ্ন জীর্ঘাংসা। হাতের নগগুলো বেশ বড় বড়, আর ঠোঁটের দু-পাশ  দিয়ে বেরিয়ে আসা - সরু শ্বদন্তদুটো চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে। হঠাৎ মেয়েটি মিলিয়ে গেল। পরক্ষণেই উদয় হলো আমার বাম দিকে। হাতের নখ দিয়ে থাবা মারল। আমি সরে যাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার কাধে নখগুলো  বসে গেল। চিড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। এবার মশালটায় আগুন ধরিয়ে ফেললাম। মশালের আলোয় মেয়েটার ভয়ানক রুপ দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল। দুহাতে শক্ত করে ধরলাম মশালটাকে। মেয়েটা আবার আক্রমণ করল। আমিও মশালের জ্বলন্ত দিক দিয়ে আঘাত করলাম। এভাবে ওর গায়ে যতবার আগুন লাগে ও ততই হিংস্র হয়ে ওঠে। এদিকে আমার খেয়াল হল আগুনটা প্রায় নিভে আসছে। আমি উল্টো দিকে ঘুরে দৌড়াতে লাগলাম। পিছনে ঝড়ের গতিতে সেই মেয়েটি। এদিকে ব্রিজের উপর থেকে সবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটি আমাকে প্রায় ধরে ফেলেছে চল্লিশ পা যাওয়ার আগেই। আমি আচমকা ঘুরে দাড়ালাম আর মশালটা ছুড়ে মারলাম মেয়েটার দিকে।  তার গায়ে আগুন ধরে গেল। এদিকে ক্লান্তিতে আমি আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে পড়ে গেলাম। আমার সারা শরীর হাপড়ের মত কাঁপছে। পানি পিপাসায় বুক শুকিয়ে গেছে। মেয়েটা হিংস্রভাবে চিৎকার করতে লাগল। আমার দিকে ছুটে এল। কিন্তু কাছে আসতে পারল না। কারন আমি চল্লিশ পা দূরে আছি। আক্রোশে গজরাতে লাগল সে। ধীরে ধীরে পুড়ে একসময় বিস্ফোরিত হল। আমি চোখ বুজে একটু জিরিয়ে নিলাম। আমি ভেবেছিলাম ওরা আমাকে নিতে আসবে, কিন্তু এল না। বোধ হয় ভয় পাচ্ছে। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর ব্রিজের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার সারা শরীরে জখম, রক্ত বের হচ্ছে। কয়েক জায়গায় পুড়ে গেছে। আমি খুব ক্লান্ত। আবার পড়ে গেলাম।
STORYLANDBD
STORYLANDBD

This is a short biography of the post author. Maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec vitae sapien ut libero venenatis faucibus nullam quis ante maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec.

2 comments:

  1. Nice horor story. I have a story. How can I send my story in this website. Please tell me about this problem.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks Mr.Robiul for stay with us. you can send us your story by e-mail. Our e-mail address is: storylandbd@gmail.com. Or you can contact with us by visiting our contact us page. Have fun and enjoy our story. Again thanks for being here.

      Delete