প্রজননতন্ত্রের সমস্যা ও সমাধান | Problem and solve of reproductive system



প্রজননতন্ত্রের সমস্যা ও সমাধান ( Problem and solve of reproductive system)


কোন গর্ভনিরোধ পদার্থ বা পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত দাম্পত্য জীবন কাটানোর পরও যদি কোনো দম্পতি গর্ভ ধারণে ব্যর্থ হয় তখন তা প্রজনন অক্ষমতা বলে বিবেচিত হবে।  দম্পতির পুরুষ সঙ্গী, নারী সঙ্গী কিংবা উভয়েই প্রজননিক  সমস্যায় ভুগতে পারেন। অর্থাৎ তারা অনুর্বর ( infertile)।  অনুর্বর বলতে বোঝায়, নির্দিষ্ট নারী-পুরুষ দম্পতির সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কম। তার মানে এই নয় যে তারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম বা বন্ধ্যা ( sterile)। বন্ধ্য বা বন্ধ্যা যাই বলি না কেন তারা কোনদিন সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হবে না, কিন্তু অনুর্বর ব্যক্তি- দম্পতি চিকিৎসার কল্যাণে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে সক্ষম। পৃথিবীর ১৫% দম্পতি অনুর্বর (infertile) কিন্তু মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ দম্পতি বন্ধ্য বা বন্ধ্যা (sterile)। প্রজননতন্ত্রের নানান সমস্যা থাকতে পারে  আসুন জেনে নেই প্রয়োজন তন্ত্রের নারী ও পুরুষের প্রয়োজন গত সমস্যাঃ 


পুরুষের প্রজননিক সমস্যার কারণ ( cause of male infertility): 


পুরুষ সদস্যদের প্রজননিক  সমস্যার মূলে রয়েছে শুক্রাণুগত বিশৃঙ্খলা।


১.বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতি ( Absence of sperm): বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতিকে অ্যাজুস্পার্মিয়া (azoospermia) বলে। শুক্caু উৎপাদন না হওয়া বা কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকতে পারে। 


২.বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যার স্বল্পতা (low sperm count): বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতা কে অলিগোস্পার্মিয়া (oligospermia) বলে। এক্ষেত্রে প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটার বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা বিশ মিলিয়নের কম থাকে। 


৩. শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা (abnormal sperm): অনেক শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে বা নিষেক ঘটাতে অক্ষম। দুটি লেজ থাকা, লেজবিহীন, মস্তকবিহীন বা অস্বাভাবিক আকৃতি ইত্যাদি হল শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা। 


৪.অটোইম্যুনিটি (autoimmunity): নিজের শুক্রাণুর প্রতি বিশেষ ইম্যুন প্রতিক্রিয়া ৫ থেকে ১০% পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ।  রক্তে শুক্রাণু প্রতিরোধী আয়ন থাকা এক ধরনের ইম্যুন প্রতিক্রিয়া। 


৫.শুক্রাণুর অকালপতন (premature ejaculation):  নারী যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরে পুরুষ যৌনাঙ্গ প্রবেশের আগেই শুক্রাণুর পতন ঘটে। 


৬.পুরুষত্বহীনতা (Impotence): যৌনাঙ্গের দৃঢ়তা রক্ষায় ব্যর্থতাও অন্যতম প্রজননিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসের সঙ্গে অবশ্য এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। 


নারীদেহে প্রজননিক সমস্যার কারণ ( cause of female infertility): 


১.ডিম্বপাতে  ব্যর্থতা (Failure to ovulate): প্রায় ১০% নারী ডিম্বপাতের ব্যর্থ বলে প্রজননিক বিষয়েও বিফল হয়। ডিম্বপাতে ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোনঘটিত।  কখনো হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থি  স্বাভাবিকভাবে হরমোন ক্ষরণে ব্যর্থ হয় ফলে ডিম্বাণুর ফলিকল ডিম্বথলির পরিস্ফুটিত হয়। ফলে ডিম্বাণুর ফলিকল (ডিম্ব থলি) পরিস্ফুটিত হয় না, ডিম্বপাতও ঘটে না। অন্যদিকে, ডিম্বাশয় থেকে স্বাভাবিক হরমোনগুলো ক্ষরিত না হওয়ায় কিংবা ডিম্বাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে নির্ধারিত হরমোন ক্ষরিত  হয় না বলে ডিম্বপাত ঘটে না।  তবে খুশির কথা এই যে, ৯০%  ক্ষেত্রে হরমোন ক্ষরণে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লেষিত হরমোন ভালো কাজ দেয়। 



২.ডিম্বনালীর ক্ষত ( Damage to the oviducts): প্রায় ৩৫% নারীর প্রজননিক সমস্যা হিসেবে ডিম্বনালীর সংক্রমণজনিত বা এন্ড্রোমেট্রিওসিস (endometriocis)  নামক অবস্থার কারণকে দায়ী করা হয়। এসব সমস্যার কারণে ডিম্বনালী পথে ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে বহন করতে পারে না। 


Uterus 


৩.জরায়ুর ক্ষত  (Uterus damage): প্রায় ৫-১০%  নারীর জরায়ু ক্ষত জনিত সমস্যার কারণে প্রজননিক জটিলতায় ভুগে। এমন ক্ষেত্রে গর্ভধারণ সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে গর্ভাবস্থা নিয়ন্ত্রণ কিংবা গর্ভপাত ঠেকানো।  


৪.সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার ক্ষত (cervix damage): গর্ভপাতের কারণে কিংবা সন্তান জন্মদানকালে সার্ভিক্সে  ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ক্ষতের টিস্যু সার্ভিক্সকে সংকীর্ণ করে দেয়, মিউকাস ক্ষরণ বন্ধ করে দিতে পারে। সার্ভিক্সের মিউকাসের মাধ্যমে জরায়ুতে শুক্রাণু সহজে পৌঁছাতে পারে। সার্ভিক্স বেশি প্রশস্ত হলে তিন মাস বয়সী ভ্রণ গর্ভপাতের শিকার হতে পারে। 


৫.শুক্রানুর প্রতি অ্যান্টিবডি ( antibodies to spam): কিছু দুর্বল ক্ষেত্রে নারী তার স্বামীর শুক্রানুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। জরায়ু সার্ভিক্স (জরায়ু-গ্রীবা) ডিম্বনালীতে এগুলো পাওয়া যায়। ওষুধ প্রয়োগের অনাক্রম্যতন্ত্র দমিয়ে রেখে সমস্যার সমাধান করতে পারলেও।  আইবিএফ (IVF)   সবচেয়ে ভালো পন্থা বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।   



এছাড়া দীর্ঘদিন জন্মনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। এছাড়া দেরি করে সন্তান নেয়াও বন্ধ্যাত্বের কারণ। আজকাল প্রায় দম্পতি দেরি করে সন্তান নিতে চান। যার ফলে শুক্রকীটের পরিমাণ কমে যায়, শুক্রাণুর গুনাগুন নষ্ট হয়। 


প্রজননতন্ত্রের সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ 


  • ধুমপান বা মদ্যপান বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে৷ 

  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। 

  • যে সকল পুরুষ বা মহিলার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। 

  • ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। 

  • পুরুষদের শুক্রানু গত সমস্যা হলে তাদেরকে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে এবং তাদের জীবন অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন খোলা বাতাস একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। 

  • যদি বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করার পরও ২ বছরের মধ্যে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা না হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।



Reference: Women's Health: Top Reproductive Problems,




 

STORYLANDBD
STORYLANDBD

This is a short biography of the post author. Maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec vitae sapien ut libero venenatis faucibus nullam quis ante maecenas nec odio et ante tincidunt tempus donec.

No comments:

Post a Comment