ফোনটা বেজে চলেছে... ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছে না অরিত্রির। তবে এবার ঘুম থেকে উঠে ফোনটা ধরল।
- হ্যালো...
- কি রে কত বেলা হয়েছে সেই খেয়াল আছে তোর?
- অনেক রাতে ঘুমিয়েছিলাম মা।
-তাড়াতাড়ি উঠে পড় তারপরে খেয়ে নিবি।
-আচ্ছা, মা।
ফোনটা রাখার পর অরিত্রি দেখলো দুপুর ১.৩০ বাজে মানে সত্যি দুপুর হয়ে গেছে। অরিত্রি উঠে গোসল করতে চলে গেল।
অরিত্রি ২৪ বছর বয়সের একজন অবিবাহিত মেয়ে এবং সে একজন লেখিকা। তার লেখা উপন্যাস তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অরিত্রি একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকে। তার বাবা-মা গ্রামে থাকতে বেশি পছন্দ করে। তবে মাঝে মাঝে অরিত্রীর কাছে এসেও থাকে। লম্বা সময় ধরে গোসল শেষে অরিত্রি খাবার খেতে বসলো।
-না, বাসাটা এখনো অনেক অগোছালো হয়ে আছে। নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করার এই এক সমস্যা সবকিছু নতুন করে গোছাতে হয়।
বাসা গোছাতে গোছাতে অরিত্রির সন্ধ্যা হয়ে গেল। এবার অরিত্রি চা হাতে নিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে গেল। নতুন বাসার ছাদে আজই প্রথম গিয়েছে। অবশ্য এই বাসায় সে এসেছে তিন দিন হয়ে গেছে। অরিত্রির ফ্ল্যাটটা একদম ছাদের নিচে।
রাতের আকাশ দেখছে অরিত্রি আর চা খাচ্ছে। এমনিতে সন্ধ্যার পর ছাদে কেউই নেই। চা খেতে খেতে গুনগুন করে গান গাইছে অরিত্রী। হঠাৎ কেন জানি মনে হল বিশাল ছায়ামূর্তি ছাদের এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেল। তবে সে এসব পাত্তাই দিল না। আসলে অরিত্রি খুব সাহসী মেয়ে ছিল।
অলৌকিক বিষয় এর উপর বিশ্বাস তেমন একটা ছিল না ওর। অরিত্রির ফোনটা এবার বেজে উঠল...
- হ্যালো অরিন্দম,দা।
-অরিত্রি তোমার নতুন উপন্যাস কবে দিবে? এদিকে বইমেলা ও চলে আসছে।
- দিয়ে দিব অরিন্দমদা, নতুন বাসায় উঠেছিতো। কয়েক দিন ঠিক করে লিখতে পারিনি।
- আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো কেমন।
ফোনটা রেখে দিয়ে যখনই অরিত্রি ঘুরেছে ঠিক তখনই একটা ছেলেকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে অরিত্রি। কারণ এতক্ষণ ছাদে সে একাই ছিল।
আর ছেলেটা একদম অরিত্রির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এতক্ষণ অরিত্রি ছাদে ঢোকার গেটেই দাঁড়িয়েছিল কেউ ভেতরে ঢোকার সময় অরিত্রির দেখার কথা ছিল। তবে অরিত্রি কাউকেই ভেতরে আসতে দেখেনি। এবার অরিত্রি ভাবলো হয়তো ছেলেটা আগেই ছাদে এসেছিল তবে অরিত্রি দেখেনি তাকে। ছেলেটাকে দেখার পর তখন আর অরিত্রি ছাদে রইল না। নিজের ফ্ল্যাটে চলে আসলো আবার। অরিত্রির ফোনটা বেজে উঠল...অরিত্রির মায়ের ফোন।
-হ্যালো মা।
- হ্যা মা কি করছিস খেয়েছিস রাতে?
- না, মা এখনো খাইনি একটু পর খাব।
- এবার বিয়েটা করেই নে মা। তোর পছন্দের কেউ থাকলে আমাদের বল।
- মা আমার পছন্দের কেউ নেই আর আমি এখন বিয়ে করবো না। আচ্ছা এখন রাখি মা পরে কথা হবে।
ফোনটা রেখে দিল অরিত্রি। এবারে তার নতুন উপন্যাস লিখতে বসলো। তবে সে কিছুতেই গল্প এগিয়ে নিতে পারছে না। খসড়া কাগজগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে বারবার।
- নাহ ছাদে চলে যাই। খোলা আকাশের নিচে চাঁদের আলোয় লেখাটা হয়তো ভালো হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ ছাদে চলে গেল। এবার ছাদে গিয়ে বেশ অবাক অরিত্রি সেই ছেলেটা এখনো বসে আছে ছাদে।
মনে মনে অরিত্রী ভাবছি ছেলেটার কি আর যাওয়ার জায়গা নেই। সারাক্ষণ এখানেই বসে আছে। তারপর অরিত্রি ছাদের এক কোনে গিয়ে লিখতে বসল। লেখার মাঝে একটা সময় ভাবতে শুরু করলো না ছেলেটার সাথে পরিচিত হওয়া যায় এখানে যেহেতু নতুন এসেছি কখনো প্রয়োজন হতেও পারে। ছেলেটাকে গিয়ে অরিত্রি বলল-
- হাই, আমি অরিত্রি। আপনি?
তবে ছেলেটা কোন উত্তর দিল না। এবার অরিত্রি বেশ রাগ হয়ে গেলো সে নিজে গিয়ে পরিচিত হতে চাওয়ার পরেও ছেলেটা কোন কথা বলল না। বেশ অবাক লাগলো। তারপর আবার অরিত্রি নিজের লেখায় মন দিল। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটা বলল।
- আমার নাম রাহুল।
- আপনার কি শুনতে নেটওয়ার্কের প্রয়োজন হয় নাকি? তখন আমি বলেছি আর এখন আপনি এতক্ষণ পর বলছেন আপনার নামটা।
- তখন আমার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল না।
- ভালো তো এখন বলতেছেন কেন আপনার নামটা কি আমি শুনতে চেয়েছি।
সেদিন আর ওদের তেমন একটা কথা হল না কারণ অরিত্রী রাগ করে নিজের ফ্ল্যাটে চলে এসেছিল। পরদিন সন্ধ্যেবেলায় আবার অরিত্রি যখন ছাদে গেলো দেখতে পেল সেই ছেলেটিকে। আজকে ছেলেটি নিজে থেকে এসেই বলছে-
-কালকের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।
অরিত্রি মনে মনে ভাবছে ছেলেটাকে যতটা অসামাজিক মনে করেছিলাম ততটা ও না।
আজ ওদের দুজনের মাঝে অনেক কথাই হল।
একদিন অরিত্রি ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করে এই বিল্ডিং এর কোন ফ্ল্যাটে তোমরা থাকো?
রাহুল কোন উত্তর দেয় না।
- আরে ভয় নেই তোমার বাসায় আমি যাবো না। অরিত্রি বলল।
রাহুল অন্য কথা বলতে শুরু করল কথাটা এড়িয়ে গেল।
আর এই বিষয়টা অরিত্রির ঠিক ভালো লাগলো না। তারপর তাদের প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো, কথা হতো তাদের মধ্যে অনেক ভাল একটা বন্ধুত্বের তৈরি হয়ে গেল । তারপর থেকে যখনই অরিত্রি সন্ধার পর ছাদে আসে তখনই তাদের দুজনের মাঝে কথা হয় তবে কখনো ওই ছেলেটাকে দিনের বেলায় অরিত্রী দেখতে পায় নি। আর অন্য কোন কারো সামনে ও রাহুলকে অরিত্রী দেখতে পাইনি। শুধু যখন অরিত্রি ছাদে একা থাকে তখনই রাহুলকে দেখতে পায়।
একদিন কথা বলার সময় অরিত্রি খেয়াল করল রাহুলের হাতের নখ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কিছুটা বড় এবং তার চেহারায় একটা হিংস্র ভাব রয়েছে। যদিও রাহুল দেখতে খুবই সুন্দর ছিল এবং তার কথা বলার ধরণ স্বভাব ছিল অমায়িক। তারপরও কেন যেন তার চেহারায় একটা হিংস্র ভাব ছিল। দিনদিন রাহুল একটা রহস্যজনক মানুষ হয়ে উঠছে অরিত্রীর কাছে। তার ব্যাপারে সব অজানা হওয়া সত্ত্বেও কেন জানি অরিত্রির রাহুলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে বার বার।
অরিত্রি ওর বাসার কাজের মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল,
- আচ্ছা এই বিল্ডিংয়ে রাহুল নামে কেউ থাকে?
- আপা আমি এইখানে এই বিল্ডিংয়ে কাজ করি অনেক বছর আপনি আসার অনেক আগে থেকেই আমি এই বিল্ডিংয়ে অনেকের বাসায় কাজ করি মোটামুটি সবার বাসাই আমি কাজ করি এবং সবাইকেই আমি জানি তবে আমি নিশ্চিত রাহুল নামে কেউ নেই এই বিল্ডিংয়ে।
অরিত্রির কাছে রাহুল যেন ক্রমশ রহস্যময় হয়ে উঠছে।
- শোন তুই আজ সন্ধ্যায় আমার সাথে একটু ছাদে যাবি। অরিত্রি ওর কাজের মেয়েকে বলল।
- আচ্ছা, আপা।
সেদিন যখন অরিত্রি এবং ওর কাজের মেয়ে সন্ধ্যায় ছাদে গেল তখন কাউকেই দেখতে পেল না ছাদে। অনেক রাত পর্যন্ত থাকা সত্ত্বেও কাউকেই দেখতে পেলো না। এবার অরিত্রির কাছে রাহুল অনেকটাই রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
পরদিন আবার যখন অরিত্রী সন্ধ্যা বেলা ছাদে একা গেল এবং দেখতে পেল রাহুল বসে আছে। এবার অরিত্রি প্রথমে রাহুলকে জিজ্ঞেসা করল গতকাল কেন ছাদে আসো নি।
-এমনি ভালো লাগছিলো না তাই আসিনি।
অরিত্রি আর কিছু বলল না শুধু রাহুলকে অবজার্ভ করতে শুরু করল। রাহুলের ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে অরিত্রী ছাদের এক কোনে এসে পড়েছে এবং হঠাৎই ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া ধরল এবং সাথে সাথে রাহুল অরিত্রির হাতটা ধরে ফেলল। অরিত্রি এবার খেয়াল করল চাদের আলোয় যখন ওর ছায়া পড়ছে কিন্তু রাহুলের কোন ছায়া পড়ছে না এটা দেখে বেশ চমকে উঠল এবং সাথে সাথে বাসায় চলে আসলো।
বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে…
Writer: Raj Ahmed Turjo
No comments:
Post a Comment