- নারে তুর্য আর ভালো লাগছেনা পড়াশোনায় এত চাপ।
- হুম তুই ঠিক বলেছিস কিন্তু কি আর করার বল।
- চল না কোথাও থেকে ট্যুর দিয়ে আসি।
- হুম সেটা করা যায় কিন্তু যাবি কোথায়?
- প্রতিবার গন্তব্য ঠিক করে তারপর ঘুরতে যাই তবে এবার কোন গন্তব্য ছাড়াই যাব।
- তাহলে দেশের কোন দিকে যাবি?
- দক্ষিণবঙ্গের দিকে যাবো।
- সব ঠিক আছে কিন্তু তুই কি অনামিকাকে নেয়ার মতলব করছিস নাকি দেখ মেয়েদের নিলে কিন্তু কোন অ্যাডভেঞ্চারই হয় না।
- হাহাহা কি করব বল ওকে না নিলে তো আমাকে যেতেই দেবে না।
- যত্তসব
- রাগ করিস না ভাই গার্লফ্রেন্ড হলে বুঝবি কি জালা।
- ঠিক আছে আমাকে রাতে আমার বাসার সামনে থেকে গাড়িতে তুলে নিস।
আবির আর তুর্য খুব ভালো বন্ধু আর অনামিকা আবিরের গার্লফ্রেন্ড। নির্দিষ্ট দিনে আবির ওদের গাড়ি নিয়ে প্রথমে অনামিকাকে তারপর অরিত্রি কে তুল্লো অরিত্রি হল অনামিকার বেস্ট ফ্রেন্ড তবে তুর্যর ঘোর শত্রু সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকে। সবশেষে আবির তুর্যকে নিতে গেলো তবে তুর্য অরিত্রি কে দেখেই বললো আবির তোরা যা আমি যাবনা। আবির বুঝে গেল কেন তুর্য যেতে চাচ্ছেনা। অনেক বুঝিয়ে ওকে নিল ওকে গাড়িতে। গাড়ি ড্রাইভ করছে আবির পাশে বসা অনামিকা আর পেছনে তুর্য আর অরিত্রি।
রাত ১১ টা বেজে ৩০ মিনিট গাড়ি চলছে চলছে হঠাৎ এক বৃদ্ধা গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলল, "বাবা আমার মেয়ে প্রেগনেন্ট ওর শ্বশুর বাড়ি এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে যদি আমাকে যদি একটু নামিয়ে দাও খুব উপকার হয়।" প্রথমে ওরা সবাই না করলেও যখন বৃদ্ধা বললো তার মেয়ের ব্যথা উঠেছে উনি না গেলে হয়তো মেয়েটা মরেই যাবে। তখন অনামিকা বৃদ্ধাকে নিতে চাইল আর আবির অনামিকার কথা ফেলতে পারেনা।
বৃদ্ধা গাড়ির পেছনে বসে আছেন। বৃদ্ধা ছিলেন সাদা একটি কাপড় পড়া এবং তার তার চেহারা কেমন একটা অদ্ভুত ছিল। যখন থেকে বৃদ্ধা গাড়িতে উঠেছে তখন থেকেই সবাই গাড়ির মধ্যে কেমন একটা উদ্ভট গন্ধ পাচ্ছিল খুব বাজে একটা গন্ধ মনে হচ্ছে কোন লাশ পচে গেলে যেমন গন্ধ হয় ঠিক তেমন একটা গল্প আসতেছিল। কিন্তু আবির বা সবাই ভাবছিল মনে মনে হয়তোবা কোন ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার জায়গার পাশ দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে তাই হয়তো বা এরকম বাজে দুর্গন্ধ আসছে। কিছুদূর গাড়িটা যাওয়ার পর আবিরের চোখ গাড়ির লুকিং গ্লাসে পড়ে এবং আবির দেখতে পায় বৃদ্ধা কিছু খাচ্ছে। আবির ভাবে হয়তো দূরের পথ তাই বৃদ্ধা কিছু নিয়ে এসেছে ওনার সাথে খাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর এবার একটা কটমট করে শব্দ শুরু হয়।
এবার গাড়িতে থাকা সবাই বুঝতে পারে তাদের সাথে কিছু খারাপ ঘটতে যাচ্ছে কারণ সবাই বুঝতে পেরে গেছিল ততক্ষনে যে এই বৃদ্ধা কোন সাধারণ মানুষ নয়। কারণ সবাই দেখতে পাচ্ছিল লুকিং গ্লাসে যে বৃদ্ধা কোন মানুষের মাংস খাচ্ছে এবং তাদের হাড় চিবোচ্ছে যার কারণে কটমট করে শব্দ হচ্ছে। অনামিকা ভয়ে আবিরের হাত চেপে ধরেছে আর পেছনে বসা অরিত্রি আর তূর্য যারা কিনা ঘোর শত্রু তারাও নিজেদের শত্রুতা ভুলে একে অপরের হাত ধরেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবির দেখতে পেলো সেই বৃদ্ধা গাড়ির সামনে এবং গাড়ির স্পিড তখন প্রায় ৮০ কিলোমিটার ঘন্টায়। সাথে সাথে বৃদ্ধার উপর দিয়ে গাড়ি চলে গেল।
কিন্তু ওরা ওখানে আর দাড়ালো না। এবার তুর্য বলল...
- আবির আমাদের সাথে কি হয়ে গেল ভাই।
এইজন্য আমি তখন গাড়িতে কাউকে তুলতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু একেকজন তো মানবদরদী তোরা।
- বৃদ্ধা যেভাবে বলেছে তাতে যে কেউ বিশ্বাস করবে এবং যে কারোরই মনে হবে যে একে সাহায্য করার প্রয়োজন। অরিত্রি বলল।
- হুমম দেখলে তো সাহায্যের ফল কি সুন্দর হয়।
- দয়া করে তোরা এখন চুপ কর এটা ঝগড়া করার সময় নয়। আবির বলল।
তারপর সকাল হয়ে গেছে রাতের ঘটনার কথা এখনো সবারই মনে আছে। ওরা কোনো একটা প্রত্যন্ত গ্রামে চলে এসেছে। গ্রাম টা বেশ সুন্দর সারাদিন গ্রামটা ঘুরে দেখল। গ্রামের মানুষের কাছে শুনতে পারল এই গ্রামে ২০০ বছরের পূরোনো একটি জমিদার বাড়ি রয়েছে। সবাই খুব কৌতুহলী হয়ে সেই জমিদার বাড়ি দেখতে গেল ততক্ষণে ওরা সবাই রাতের ঘটনার কথা ভুলেই গেছে প্রায়।
জমিদার বাড়ি টা খুবই সুন্দর যদিও ধ্বংসাবশেষ হিসেবে রয়েছে। ওরা ঠিক করলো আজ রাতে এই জমিদারবাড়িতে ক্যাম্প ফায়ার করবে। গ্রামের অনেক লোক ওদের নিষেধ করলেও ওরা কারো কথা শুনল না। সন্ধ্যার একটু পরপর, আবির ও অনামিকা একটি পুকুরের ধারে বসে গল্প করছে আর অন্যদিকে অরিত্রি আর তুর্য বসে বসে ঝগড়া করছে।
ঠিক এমন সময় অরিত্রী ওর কানের কাছে কিছু একটা শুনতে পেলো মনে হচ্ছে কেউ বলছে যে চলে যা, চলে যা। মনের ভুল ভেবে অরিত্রি আবার তুর্যকে বলল...
- ভীতু কাল রাতে ভয় পেয়ে আমার হাত ধরে।
- হাতটা তুমি ধরেছিলে আমি না মিথ্যা কথা বলবা না মিথ্যা কথা আমার ভালো লাগেনা। তুর্য বলল।
তারপর তুর্য রাগ হয়ে ওখান থেকে চলে আসে অরিত্রিকে একা ফেলে।
আবির আর অনামিকা কথা বলছে...
- আবির দেখো কি গা ছমছমে সময় একটা পরিবেশ তাইনা। অনামিকা বলল।
- কই আমার কাছে তো বেশ লাগছে তুমি আর আমি পুকুরপাড়ে সুন্দর একটা রাত। আচ্ছা শোনো আমি একটু আসতেছি হ্যাঁ। আবির বলল।
- কই যাচ্ছ আমাকে একা ফেলে আমার তো খুব ভয় করছে।
- আরে বাবা আসছি দুই মিনিট লাগবে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ গিফট আছে।
আবির চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো
- জানো আমার না মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দেখছে আর গত কাল রাতের ঘটনাটা আমি এখনো ভলতে পারিনি। অনামিকা বলল।
- আরে ধুর তুমি শুধু শুধু ভাবছো আমাদের গতকাল রাতে হয়তো কোন হ্যালুসিনেশন হয়েছে। আবির বলল।
- তা আমার গিফট কই যা আনতে গেলা।
আবির কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল। আবীরের চোখটা লাল টকটকে রক্তের মতো। অনামিকা দেখে বলল তোমার চোখে কি হয়েছে এরকম রক্ত জমাট বেঁধে আছে মনে হচ্ছে কেন আবির কোন উত্তর দিচ্ছে না কি হলো আবিরের হঠাৎ করে আবির তো এরকম চুপচাপ বসে থাকার মানুষ নয়।
অনামিকা বাম দিক থেকে ডান দিকে তাকাতেই দেখল আবীর বসে রয়েছে। অনামিকা কিছু বলার আগেই আবির বলে উঠলো...
- হ্যাপি বার্থডে মাই ডিয়ার অনামিকা বলে আবির অনামিকার হাতে একটি ব্রেসলেট পরিয়ে দিল।
- তুমি এই মাত্র আসলে। অনামিকা বলল।
- হুমম সরি একটু দেরি হয়েছে তুর্যর জন্য।
- তাহলে আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বললাম।
অনামিকার বুঝতে বাকি রইল না এখানে কোন অশরীরী কিছু রয়েছে যে আবিরের রূপ ধরে এসেছিল। এবার অনামিকা বলল আবিরকে,
- আবির আমি আর এখানে এক মুহূর্ত থাকতে চাই না এখানে কিছু একটা আছে আবির আমাকে বিশ্বাস করো।
- অনামিকা তুমি শুধু শুধু টেনশন করছ কেন এখানে কিছু নেই দেখো আমি আছি। কাল রাতের ওসব ঘটনার কারনে তুমি এসব ভাবছ।
এই বলতে না বলতেই হঠাৎ এক বিকট শব্দে চিৎকার ভেসে আসলো অরিত্রির কণ্ঠস্বর থেকে। বাচাও বাচাও। অনামিকা আর আবির দৌড় দিল আওয়াজটা যেদিক থেকে ভেসে আসছে। গিয়ে দেখে অরিত্রী অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি অরিত্রি মুখে পানি দিয়ে ওর জ্ঞাণ ফিরিয়ে আনলো। তারপর জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে ও কেন চিৎকার করেছে। অরিত্রি বলতে শুরু করল...
- আমি আমি অনেকক্ষণ ধরে তুর্যকে খুঁজছি। কোথাও না পাওয়াতে জমিদার বাড়ির ভেতরের দিকটায় গিয়েছে। ভিতরে ঢোকার সাথে সাথেই আমি দেখতে পাই কাল রাতের সেই বৃদ্ধা মহিলা বসে রয়েছে এবং বললো যে, আমাকে তোরা গাড়ি চাপা দিয়েছিস। তোদের আমি ছাড়বো না এই বলে আমার কাছে আসতে থাকে আর আমি চিৎকার করতে থাকি এবং একসময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
কিন্তু তাহলে তুর্য কোথায়? আবির বলল।
তারপর সবাই মিলে তুর্যকে খুঁজতে শুরু করলো। সবাই মিলে তুর্য তুর্য করে ডাকছে কিন্তু তুরৃয যে কোনো সাড়া দিচ্ছে না হঠাৎ পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে তুর্য পুকুরপাড়ের সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে। ওর সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ ওর শার্ট ছিড়ে গিয়েছে। এবার তূর্যকে সুস্থ করল এবং জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে তোর। তুর্য বলল।
- আমি অরিত্রির সাথে ঝগড়া করে অনেক আগেই জমিদার বাড়ির পেছনদিকে গিয়ে বসেছিলাম হঠাৎ দেখি আবির আমার কাছে আসলো কিন্তু কোন কথা বলছিল না এবং দেখলাম ওর চোখ লাল টকটকে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করাতে ও কোনো উত্তর দিচ্ছিল না তাই আমি ওকে বললাম কিরে তোর কি হয়েছে তুই কোন কথা বলছিস না কেন। ঠিক তখনই রেগেমেগে আমার দিকে চাইল আবির এবং দেখলাম ওর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এবং আমি তারপর ঠিক স্পষ্ট দেখতে পেলাম কোন এক রাজা তার মুকুট পরে আমার সামনে বসে আছে এবং তার চোখ দুটো টকটকে লাল এবং সে আমাকে বলছে যে তোরা কেন এখানে এসেছিস তোরা কেন এখানে এসেছিস। আমি সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে এবং আমার গায়ে আচর দিতে থাকে এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
অনামিকা বলে উঠল এখানে আর এক মুহূর্ত নয় তাড়াতাড়ি চলো এখান থেকে এই জায়গাটা খুবই বাজে একটা জায়গা আমরা ফেঁসে গেছি এই জায়গায়। ওরা সবাই ওদের জিনিসপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়ি চলছে চলছে কিন্তু ওদের মনে হচ্ছে এক জায়গায় গাড়ি চলছে। আবির বলছে মনে হচ্ছে রাস্তা টা হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে তে এসেছিলাম। তবে কি হল। এদিকে তুর্যর অবস্থা খারাপ হচ্ছে ওকে যেখান থেকে আচর দিয়েছে সেখানে খুব ব্লেডিং হচ্ছিল। তারপর হঠাৎ গাড়ি টা বন্ধ হয়ে যায় স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করা সত্ত্বেও গাড়িটা স্টার্ট নিচ্ছিল না।
ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামল। আবির বলল, গাড়ির ইঞ্জিনের পানি শেষ পাশের পুকুর থেকে আমি পানি নিয়ে আসছি। এই বলে আবির চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবির ফিরে আসলো এবং বলল সবাই এখান থেকে পালাও এইদিকে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে তাড়াতাড়ি পালাও। সবাই দৌড়ে তারপর জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করে। কিন্তু একটু পর পেছন ফিরে দেখে আবির নেই। তখন অনামিকা বুঝে গেল যে তাহলে ওটা আবির ছিল না অন্য কেউ ছিল আবিরের রূপ ধরে কেউ এসেছিল। ওরা আবার পেছনে ফিরল আর দেখতে পেল কেউ একজন তুর্যকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে ওরা শত বাধা দেয়ার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তুর্যকে নিয়ে গেল জঙ্গলের ভিতরে। এবার ওরা কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। আবির চলে আসলো। ওরা তুর্যকে ছাড়া গাড়িতে উঠতে না চাইলেও আবির জোর করে উঠালো বলল আমাদের এখান থেকে যেতে হবে। গাড়ি আবার চালাতে শুরু করল আবির
তারপর ওরা একটা বাড়িতে এসে বলল কেউ আছেন আমাদের বাচান। দরজা খুলে সেই বৃদ্ধা বের হয়ে এসেছে আর অনামিকাকে হাত দিয়ে গলা উঁচু করে ধরেছে। অনামিকার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আবির তখন দিয়াশলাই এর আগুন ধরতেই বৃদ্ধা অনামিকাকে ছেড়ে দেয়। আবার ওরা গাড়িতে উঠে চলতে শুরু করে। এক মৃত্যুপুরীতে ফেঁসে গেছে ওরা। তারপর এক মসজিদে এসে ওরা থামে এবং মসজিদের ভিতরে গিয়ে প্রথমে ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে ওরা সকলেই পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে। ইমাম সাহেব ওদের পানি পান করায় এবং তারপর ওরা সকলে পুরো ঘটনা খুলে বলে। তখন ইমাম সাহেব বলে তোমাদের ওই বাড়িতে যাওয়া একদমই ঠিক হয়নি এবং রাতের বেলা এভাবে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া একদমই ঠিক হয়নি কিছু দুষ্টু জিন তোমাদের পিছনে লেগে গিয়েছিল। আর তোমাদের বন্ধুকে মেরে ফেলেছে। ভোর হয়ে এসেছে ফজর এর নামাজ শেষ করে তোমরা ফিরে যেও।
ফিরে আসার সময় শুধু একটা কথাই সবাই ভাবছে। তুর্যকে আর হয়তো ফিরে পাওয়া যাবে না এবং কি জবাব দিবে ওর বাড়ির লোকেদের কাছে ওরা।
Author:
Hridoy Ahmed Labib
No comments:
Post a Comment